1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মানুষ রাহুলকে 'নন পারফর্মিং' পাপ্পু ভাবে: নাকভি

৩১ মার্চ ২০২৩

সম্প্রতি সুরাতের আদালত মানহানির মামলায় রাহুল গান্ধীকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে৷ তারপর আইনানুসারে রাহুলের সাংসদপদ খারিজ হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/4PWuy
Mukhtar Abbas Naqvi, Vizepräsident der Bharatiya Janata Partei (BJP)
ছবি: DW

এরপর রাহুলকে অবিলম্বে সরকারি বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ সব বিরোধী দল রাহুল তথা কংগ্রেসের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে৷ কংগ্রেস দেশজুড়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে৷ রাহুলের অভিযোগ, ভারতে মতপ্রকাশের অধিকার নেই৷ তিনি আদানি নিয়ে সংসদে বলতে চেয়েও পারেননি৷ আর মোদীদের বিরুদ্ধে জনসভায় যা বলেছিলেন, তা সত্যি এবং তিনি তার থেকে পিছু হঠবেন না৷ এসব বিষয় এবং বিজেপির কৌশল নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন বিজেপি নেতা ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভি৷

ডয়চে ভেলে: সম্প্রতি মানহানির মামলায় রাহুল গান্ধীকে দুই বছরের সাজা দিয়েছে আদালত৷ তারপর এই সিদ্ধান্তের একটা বিশাল রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে৷ কীভাবে দেখছেন এই ঘটনাকে?

মুখতার আব্বাস নাকভি: প্রথমে আমি বলব, এটা পুরোপুরি আদালতের বিষয়৷ কংগ্রেস ও তার নেতার সামনে বিকল্প তো আছে৷ তারা উচ্চ আদালতে আবেদন জানাতে পারে৷ এটা তো কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়, আইনি বিষয়৷ কিন্তু এই অ্যাংরি ডাইনেস্টি(ক্রুদ্ধ পরিবারবাদী) চাইছে, তিনি একাই রাজনীতিকে প্রাভাবিত করবেন,  সেটা সম্ভব নয়৷ ২০১৪ সালের পর থেকে এই ডাইনেস্টির চিন্তার কারণ হলো, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে পরিবারবাদের রমরমার দিন শেষ৷ মোদীজি সবচেয়ে সফল প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন৷ একজন অনগ্রসর শ্রেণির মানুষ নিজেকে এভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন৷ যে পরিবারবাদীর মনে হতো, তার পরিবার মানেই হলো গণতন্ত্র, তিনি তো হতাশ হবেনই৷

ডয়চে ভেলে: দুটো অভিযোগ কংগ্রেস ও বিরোধী দলগুলি করেছে৷ প্রথমত, তাদের বলতে দেয়া হচ্ছে না৷ মতপ্রকাশের অধিকারের উপর আঘাত হানছে মোদী সরকার৷ দ্বিতীয় অভিযোগ হলো, আদানি নিয়ে সংসদে রাহুল তথা বিরোধীদের একটা শব্দও বলতে দেয়া হয়নি৷ কী জবাব দেবেন এই অভিযোগের?

মুখতার আব্বাস নাকভি: নয় বছরে ৯০টিরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এরা সংসদে তুলেছে৷ প্রত্যেকবারই হিট অ্যান্ড রান নীতি(মানে অভিযোগ করেই জবাবের অপেক্ষা না করে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করা বা অচল করার চেষ্টা) নিয়ে চলেছে৷ এভাবে গণতন্ত্র ও সংসদকে হাইজ্যাক করতে চায় ওরা, সেটা সম্ভব নয়৷ ২০১৪-র পর প্রতি ছয়মাস পরপর ওরা মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে আসে৷ আসলে পরিবার আজও এটা হজম করতে পারছে না, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার এভাবে কাজ করে যাচ্ছে৷ কোথায় বলতে দেয়া হচ্ছে না? সংসদের ভিতরে ও বাইরে সর্বত্র ওরা বলছেন৷ যে যাত্রা বের করেছিলেন, সেখানে প্রতিদিন বলেছেন৷ ওদের তো কোনো আন্দাজই নেই, যেখানে গণতন্ত্র নেই, সেখানে কী অবস্থা হয়৷ জরুরি অবস্থার সময় কী হয়েছিল৷ আপনি তো দেশের ভিতরে ও বাইরে সর্বত্রই বলছেন৷ আসলে এদের কাছে কোনো ইস্যু নেই৷ ওদের তথ্য নেই, যুক্তিও নেই৷ তাই হিট অ্যান্ড রান ছাড়াও ওদের কোনো নীতি নেই৷ কংগ্রেস নন পারফর্মিং পার্টি এবং মানুষ রাহুলকে নন পারফর্মিং পাপ্পুর মতো দেখে৷ কংগ্রেসের ঢোকার রাস্তা শুনশান৷ বেরোবার গেটে ভিড় লেগে আছে৷

ডয়চে ভেলে: আপনার কি তাহলে মনে হয়, কংগ্রেস ও রাহুল এতদিনে একটা ইস্যু বা রাজনৈতিক বিষয় হাতে পেয়েছে?

মুখতার আব্বাস নাকভি: আমার তা মনে হয় না৷ আমার উদাহরণ নিন৷ আমার রাজ্যসভার মেয়াদ শেষ হয়ে গেল৷ আমি তখন কেন্দ্রে পূর্ণ মন্ত্রী ছিলাম৷ তা সত্ত্বেও ছয়দিনের মধ্যে নিজে থেকে বাংলো খালি করেছি৷ সুষমা স্বরাজ সাংসদ হননি তো ছয়দিনের মধ্যে বাংলো খালি করে দেন৷ অরুণ জেটলি মন্ত্রী হতে পারেনি তো সরকারি বাংলো ছেড়ে দেন৷ এরকম অজস্র উদাহরণ আছে, রাহুল তো তা করলেন না৷

ডয়চে ভেলে: কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে কংগ্রেস শুধু রাজনৈতিক বিষয় হাতে পেয়েছে তাই নয়, বিরোধীরাও একজোট হয়ে কংগ্রেসের পাশে এসেছে৷ এতদিন তারা কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে জোটের চেষ্টা করছিল৷ এখন কংগ্রেসের সঙ্গে তারা হাত মিলিয়েছে, এটা তো বড় ঘটনা৷

মুখতার আব্বাস নাকভি: একটা কথা বলি৷ যে বিরোধী ঐক্য বা জোটের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে যত ছিদ্র, তার থেকেও বেশি নেতাদের মত৷ আগে তারা ওই ছিদ্র ভরাট করুক, নেতারা একমত হোন, তারপর দেখা যাবে৷ দ্বিতীয়ত, বিরোধী ঐক্যের আলাদা কারণ থাকে৷ জরুরি অবস্থার পর যে বিরোধী ঐক্য হয়েছিল, তা হয়েছিল সংসদের ক্ষমতা বাতিল করা, সব বিরোধী নেতাকে জেলে ভরা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করার প্রতিবাদের কারণে৷ গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে সবাই একজোট হয়েছিল৷ এদের কাছে এখন কী বিষয় আছে? শুধু মোদী হঠাও৷ যত এরা মোদী হঠাওয়ের কথা বলে, ততই মানুষ বলে, মোদীকে ক্ষমতায় নিয়ে এস৷ এটাই ফারাক৷ সাধারণ মানুষ ও পরিবারবাদীদের মধ্যে এটাই ফারাক৷ যে সব দলের পরিবারবাদ বিপদের মুখে তারা একজোট হচ্ছে৷ লালু, মুলায়ম-সহ বিভিন্ন পরিবারবাদী দল একসঙ্গে আসছে৷

ডয়চে ভেলে: তাহলে কি ২০২৪-এর ভোটে পরিবারবাদই প্রধান বিষয় হবে?

মুখতার আব্বাস নাকভি: না, না৷ সরকারের কাজই প্রধান বিষয় হবে৷ আপনার মনে থাকবে, যখন জনতা পার্টি সরকারের পতন হয়েছিল, তখন কংগ্রেস বলেছি্ল, তারাই একমাত্র স্থায়ী সরকার দিতে পারে৷ তারপর বারবার তারা একই কথা বলেছে৷ মোদীজি কংগ্রেসের প্রচারের মূল বিষয়টিকেই মিথ্যা প্রমাণিত করেছেন৷ নয় বছর ধরে মোদীজি শাসন করছে৷ ২০১৪ ও ২০১৯-এ বিজেপি-কে ক্ষমতায় এনেছেন৷ তিনি শরিকদের সঙ্গে নিয়ে চলেছেন৷ কিন্তু স্থায়ী সরকার দিয়েছেন৷ কোনো পলিসি প্যারালিসিস নয়, নেতার হাতে যে শক্তি থাকে, তা এখানে রয়েছে, এই সরকার দক্ষ, পারদর্শী ও কার্যকর সরকার৷ মানুষের মনে যে মিথ্যা ভীতি ছিল, কংগ্রেসই স্থায়ী সরকার দিতে পারে, সেই ভুল ধারণা আর নেই৷ তাই ২০১৪-র পর থেকে কংগ্রেস আর বিজেপি-কে আক্রমণ করছে না, মোদীকে করছে৷ অন্য দলের নেতাকেও আক্রমণ করছে না৷ তাদের একমাত্র ধ্যানজ্ঞান মোদীর ভাবমূর্তি ধুলিসাৎ করা৷ সেজন্যই তারা বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মোদীর সম্পর্কের মতো বিষয় তোলে শুধু তার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে৷ কিন্তু আসল কথা হলো, মোদী দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতা ও অপরাধকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন৷

ডয়চে ভেলে: আদানি নিয়ে লোকসভায় আলোচনা হওয়ার ক্ষেত্রে কি বাধা আছে?

মুখতার আব্বাস নাকভি: কোনো বাধা নেই৷ সংসদে এর আগে তারা রাফালের বিষয় তুলেছে৷ ওরা কী বলেছিল? আলোচনা করতে দিলে সংসদ ও দেশে ভূমিকম্প আসবে৷ ওরা আলোচনা করেছে, ভূমিকম্প তো আসেনি৷ ওদের দলে বরং এসেছে৷তার আগে বলেছিল, নোটবন্দি নিয়ে আলোচনা করতে দাও, আলোচনা হয়েছে৷ তারা তার আগে অসহিষ্ণুতা নিয়ে আলোচনা করেছে, কৃষি আইন নিয়ে হয়েছে৷ এইসব আলোচনা একদিন নয়, কখনো ছয়দিন, আটদিন ধরে করেছে৷ আলোচনা হয়েছে, বিতর্ক হয়েছে এবং তা বাতিলও হয়ে গেছে৷  পেগাসাসের ইস্যু ছিল৷ বলেছিল ফোনে আড়িপাতা হচ্ছে৷ তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে৷ আদানি নিয়েও আলোচনা হত৷ কিন্তু রাহুল নিজেই বিদেশে বললেন, সংসদে বলতে দেয়া হয় না৷  আরে আমি সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ছিলাম৷ সেখানে নিয়ম হলো, কেউ বলার জন্য উঠে দাঁড়ালে, স্পিকার বা চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া তার মাইক অন করা হয় না৷ প্রধানমন্ত্রী বা বিরোধী নেতা বলতে চাইলেও হবে না৷ আমাদেরও অনেকবার মাইক অন করা হয়নি৷ একজনকে স্পিকার বলার জন্য অনুমতি দিয়েছেন৷ আপনি তার মধ্যে বলতে চাইলে স্পিকারের অনুমতি দরকার৷ মনে রাখতে হবে, সংসদ ও নিয়ম, ঐতিহ্য এবং স্পিকারের নির্দেশ মেনেই চলে৷