1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পোল্যান্ডের ডানজিগ শহরে গ্যুনটার গ্রাস গ্যালারি

৭ ডিসেম্বর ২০০৯

বিশ্বখ্যাত নোবেলজয়ী জার্মান লেখক গ্যুনটার গ্রাসের জন্মস্থান পোল্যান্ডের ডানজিগ শহরের সর্বত্রই তাঁর উপস্থিতি অনুভব করা যায়৷ গ্যুন্টার গ্রাস সমিতির পক্ষ থেকে তাঁর ভক্তরা নিয়মিত আয়োজন করেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের৷

https://p.dw.com/p/KrvE
ফাইল ফটোছবি: dpa

সম্প্রতি গ্যুনটার গ্রাসের নামে একটি গ্যালারিরও উদ্বোধন করা হল ডানজিগ শহরে৷

এই গ্যালারি ভবনে স্বনামধন্য জার্মান লেখক গ্যুনটার গ্রাসের নানা শিল্পকর্ম স্থান পাবে৷ আয়োজন করা হবে সাহিত্যসন্ধ্যা, ওয়ার্কশপ, বক্তৃতা ইত্যাদির৷ গ্যালারির পাশে কিছুদিনের মধ্যেই গ্যুন্টার গ্রাসের নামে একটি ক্যাফেও নির্মাণ করা হবে৷

ডানজিগের পুরানো শহরের প্রাণকেন্দ্রে স্থাপিত হয়েছে এই গ্যালারিটি৷ আপাতত ডানজিগের জাতীয় মিউজিয়ামের গ্রাস-শিল্পসংগ্রহ থেকে আনা সামগ্রী দিয়ে সাজানো হয়েছে গ্যালারির বিশাল প্রদর্শনীটি৷ দেয়ালে ঝোলানো হয়েছে গ্রাসের আঁকা নানা রেখাচিত্র ও গ্রাফিক৷ ভবিষ্যতে বিদেশ থেকেও গ্রাসের নানারকম শিল্পকর্ম নিয়ে আসা হবে এখানে৷ গ্যালারির প্রধান ইভোনা বোগোস বলেন, ‘‘এই সংগ্রহকে আরো বিস্তৃত করা যেতে পারে৷ আমরা এটা বড় করার চেষ্টা চালিয়ে যাব৷''

এ ক্ষেত্রে গ্রাস নিজেই উদ্যোগ নিতে শুরু করেছেন৷ উদ্বোধনের সময় নিজের আঁকা বহু রেখাচিত্র উপহার দিয়েছেন তিনি গ্যালারিটিকে৷ অবশ্য প্রথম থেকেই তিনি এই ভবনের স্থাপনার কাজে সহযোগিতা করে আসছেন৷ পোল্যান্ডের বিখ্যাত শিল্পীদের শিল্পকর্মের পাশাপাশি তাঁর সৃষ্টিও যে প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে, তাতে তিনি বিশেষভাবে আনন্দিত৷ এ প্রসঙ্গে গ্যুনটার গ্রাস বলেন, ‘‘এই ধরণের প্রদর্শনী জার্মানির ল্যুবেক শহরেও রয়েছে৷ সেখানে মাঝে মাঝে আমার আঁকা রেখাচিত্র ও বিভিন্ন লেখা প্রদর্শিত হয়৷ আবার আরেক সময় প্রদর্শিত হয় অন্যান্য লেখকের শিল্পকর্ম৷ এমনটি করা যেতে পারে ডানজিগের গ্যালারিতেও৷''

জন্মস্থান ডানজিগের সঙ্গে গ্রাসের যে সবসময় সুসম্পর্ক ছিল, তা বলা যায়না৷ বছর তিনেক আগে এক আত্মকাহিনিতে গ্যুন্টার গ্রাস নাৎসিদের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভাফেন-এস এস বাহিনীর সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততার কথা প্রকাশ করায় পোল্যান্ডে সমালোচনার তীব্র ঝড় বয়ে যায়৷ এমনকি পোল্যান্ডের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট লেখ ভালেঁসা গ্রাসের ডানজিগ শহরের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব বাতিলের পক্ষে মত দেন৷ ইতিমধ্যে অবশ্য সেই ক্ষত অনেকটাই শুকিয়ে উঠেছে৷ আর তাই তো গ্রাস-গ্যালারি উদ্বোধনকালে বহু মানুষ লেখক গ্যুনটার গ্রাসকে স্বতস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানায়৷

ডানজিগকে বলা যায় গ্রাসের শহর৷ গ্যুনটার গ্রাস সমিতি এই শহরের সবচেয়ে বড় সংগঠন৷ যার সদস্য সংখ্যা একশরও বেশি৷ এর মধ্যে একজন আন্দ্রেই ফ্যাক ৷ ছেলেবেলাতেই দেখেছেন তিনি গ্রাসকে৷ আন্দ্রেই স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘‘আমার প্রয়াত বাবা ও মা-এর সঙ্গে গ্যুনটার গ্রাসের সেই ৬০-এর দশকেই বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে৷ আমাদের বাসার দেয়ালে এখনও শোভা পাচ্ছে গ্রাসের আঁকা বহু রেখাচিত্র৷ তাঁর লেখা বই, চিঠিপত্র, ও অন্যান্য স্মৃতিচিহ্নও রয়েছে আমাদের কাছে৷''

গ্যুনটার গ্রাসের জন্ম হয়েছিল যে বাড়িটিতে তার কাছেই আন্দ্রেই-র পরিবার বসবাস করছেন সেই তখন থেকে ৷ আন্দ্রেইর মা মারিয়া ফ্যাক গ্যুনটার গ্রাসের সঙ্গে হৈ হুল্লোড় করা সেই দিনগুলোর কথা এখনও ভোলেননি৷

‘‘তিনি অত্যন্ত প্রাণবন্ত এক মানুষ৷ খুব ভাল নাচতে পারতেন তিনি৷ আমরা অনেকে মিলে বিভিন্ন রেঁস্তোরায় খেতে যেতাম এবং সবখানেই চলতো নাচগান৷ আর গ্রাসই তা শুরু করতেন প্রথমে৷''

ডানজিগ শহরে গ্রাসকে নিয়ে লোকে শুধু আনন্দোৎসবই করেনি৷ তাঁর কাছ থেকে মানুষ অনেক কিছু শিখেওছে৷ এ প্রসঙ্গে গ্রাস বলেন, ‘‘পোল্যান্ডের বহু মানুষই আমাকে বলেছেন যে, আমার বই থেকে ডানজিগ শহরের আদি ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন তারা৷ কেননা জার্মানদের বসবাসের সময় এবং তারও আগের অনেক কথা উঠে এসেছে আমার লেখায়৷ এর ফলে শহরটির নেপথ্যকাহিনি মানুষের কাছে সম্পূর্ণ এক ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে৷''

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক