1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তাপদাহ : লাখো মৃত্যু রুখতে কতটা প্রস্তুত মধ্যপ্রাচ্য?

৫ জুন ২০২৩

জাতিসংঘের চিফ হিট অফিসার এলেনি মিরিভিলির আশঙ্কা বৈশ্বিক তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে তাতে অটিরেই চরম বিপর্যয় দেখা দিতে পারে৷ গবেষণা বলছে, চলতি শতকে তীব্র তাপজনিত কারণে শুধু ইরাকেই মৃত্যু হতে পারে এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষের৷

https://p.dw.com/p/4SDI2
Hitzewellen in Nahost | Saudi-Arabien
ছবি: Franck Fife/AFP/Getty Images

ইরাকে কখনো কখনো তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসও (১২২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ছাড়িয়ে যায়৷  সেই অবস্থায় মানুষ বাঁচে কী করে? কী করে অফিসের কাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য করে? খোলুদ আল-আমিরি জানালেন, সেরকম গরমে ইরাকের বেশির ভাগ মানুষ ঘরেই থাকেন, ‘‘ (তাপমাত্রা যে নাগালের বাইরে চলে যাবে সে বিষয়ে) তথ্য আমরা সাধারণত (রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেল) আল ইরাকিয়ার কাছ থেকে আগেই পেয়ে যাই৷ কখনো কখনো তা ফেসবুকেও দেয়া হয়৷ তারা আমাদের কাজে না যেতে বলে দেয়৷ যাদের স্বাস্থ্য খুব নাজুক তাদের বাইরে না যাওয়ার কথাও বলে দেয়া হয়৷ শুধু তা-ই  নয়, আমরা যেন পাখি বা অন্য প্রাণীদের জন্য গাছের নীচে পানি রেখে আসি- সে কথাও বলে দেয়া হয় আমাদের৷ "

জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রতিবেদকদের বাগদাদভিত্তিক  সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা খোলুদ আল-আমিরি আরো জানান, সরকারের প্রতি বেশি আস্থা অতি অল্প বলে, তীব্র তাবদাহের সময় প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে বাঁচার কৌশলটা নিজে নিজেই শিখে নেয় ইরাকের মানুষ৷

জাতিসংঘের চিফ হিট অফিসার এলেনি মিরিভিলি (বাঁ দিকে)
জাতিসংঘের চিফ হিট অফিসার এলেনি মিরিভিলি (বাঁ দিকে)ছবি: DW

বিপর্যয়ের শঙ্কায় মধ্যপ্রাচ্য পূর্ব আফ্রিকা

গত মে মাসে বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল নেচার সাসটেইন্যাবিলিটি-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫%-এর চেয়ে বেড়ে ভয়াবহ একটা অবস্থায় চলে যেতে পারে৷ গত এপ্রিলে ব্রিটেনের বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ল্যান্সেট আগামী কয়েক দশকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ব্যাপক হারে বাড়ার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের কী অবস্থা হতে পারে তা নিয়ে একটা সমীক্ষা প্রকাশ করে৷

সেখানে বলা হয়, তীব্র তাবদাহের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে তাপদাহজনিত রোগে মৃত্যুহার অনেক বাড়বে৷ এখন তাপদাহজনিত রোগে ১০০০ জনের মধ্যে যেখানে মাত্র দুই জনের মৃত্যু হয়, তখন সেই সংখ্যাটা দাঁড়াবে ১২৩-এ৷

তাপদাহ এই হারে বাড়তে থাকলে ২১০০ সালের মধ্যে শুধু ইরাকেই তাপদাহজনিত অসুস্থতায় মারা যাবে এক লাখ ৩৮ হাজারের মতো মানুষ৷

প্রবীণ এবং নগরবাষীদের ঝুঁকি বেশি

ল্যান্সেটের সমীক্ষায় বলা হয়, ২০৫০ সাল নাগাদ মধ্যপ্রাচ্যের ৭০ ভাগের মতো মানুষ বড় বড় শহরে বসবাস শুরু করবে৷ এর প্রভাবে শহরাঞ্চলে তাপমাত্রা অনেক বাড়বে৷ ফলে তাপদাহজনিত কারণে মৃত্যুও বাড়বে৷ গবেষকরা বলছেন, মৃত্যু বেশি বাড়বে প্রবীণদের মাঝে৷

গবেষকরা আরো বলছেন, চলতি শতকে বিশ্বের কোনো কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা ২ থেকে ৯ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়তে পারে৷

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আশঙ্কা, তাপদাহে মধ্যপ্রাচ্যের অভিবাসী কর্মীদের মৃত্যুঝুঁকি বাড়বে
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আশঙ্কা, তাপদাহে মধ্যপ্রাচ্যের অভিবাসী কর্মীদের মৃত্যুঝুঁকি বাড়বেছবি: Chandan Khanna/AFP/Getty Images

কিন্তু জাতিসংঘের চিফ হিট অফিসার এলেনি মিরিভিলি বলেন, ‘‘আবহাওয়াজনিত বিপর্যয়গুলোর মধ্যে চরম তাপমাত্রা সবচেয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠলেও সারা বিশ্বেই বিষয়টিকে অবমূল্যায়ন করা হয় বা খুব কম গুরুত্ব দেয়া হয়৷  কিন্তু বড় বিপর্যয় এড়াতে হলে সরকারগুলোর উচিত চরম তাবদাহ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রস্তুতি এবং নিজেদের রক্ষার কৌশল নির্ণয়ের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা৷''

পরিকল্পনায় কী কী রাখা উচিত সরকারের? এই প্রশ্নের উত্তরটা সবচেয়ে সহজ করে দিয়েছেন আল-আমিরি, ‘‘(তাপদাহের সময়ের কথা মাথায় রেখে) আমাদের জরুরি সেবা দেয়ার জন্য ডেডিকেটেড ক্লিনিক গড়তে হবে, আগাম প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য তথ্য সরবারের ব্যবস্থা আরো উন্নত করতে হবে৷ এসবের পাশাপাশি প্রচুর গাছ লাগিয়ে সবুজের বিস্তার ঘটাতে হবে৷''

তবে ল্যান্সেটের গবেষকরা মনে করেন, এসব করলে তাপমাত্রা আশানুরূপ কমবে না৷ তাদের মতে, তাবদাহজনিত মৃত্যুর ৮০ ভাগই হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে আর সেই বিপর্যয় এড়াতে হলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রির মধ্যে আটকে রাখতে হবে৷

কাথরিন শায়ের/ এসিবি