1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কলকাতায় শব্দের দাপট, রেহাই নেই বইমেলারও

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

শব্দ দূষণ রোধে পথে নেমেছে কলকাতা পুলিশ। নো হংকিং প্রচার চলছে। কিন্তু ১২ দিনের বইমেলায় দাপট দেখালো লাউড স্পিকার। ক্ষুব্ধ প্রকাশকদের একাংশ।

https://p.dw.com/p/4NSDx
ছবি: Payel Samanta/DW

বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। এ প্রবাদ চালু আছে। কোনো পার্বণই অ-মাইক নয়। দুর্গাপুজো থেকে মেলা-খেলা, সর্বত্র উচ্চগ্রামে গান কিংবা ঘোষণা শোনার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে বঙ্গবাসীর। সাধের বইমেলাও তা থেকে বাদ পড়ছে না। রবিবার শেষ হওয়া আন্তর্জাতিক পুস্তক মেলায় কান ঝালাপালা হয়েছে পুস্তক বিক্রেতা থেকে পাঠক-ক্রেতাদের।

মেলায় পুস্তক বিক্রেতা, প্রকাশকদের পাশাপাশি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক ও আধা সরকারি সংস্থা, ডিজিটাল মিডিয়া তাদের প্রচারের জন্য স্টল দেয়। প্রকাশনা ব্যতীত অন্যান্য সংস্থার স্টল থেকে শব্দদূষণ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মেলার মাঠে ঘুরে দেখা গিয়েছে সেই দৃশ্যই। 

ব্রডব্যান্ড পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার স্টলে কুইজের আসর বসছিল নিয়মিত। স্টলের ভিতরে নয়, বাইরে পাঠক-দর্শকদের বৃত্তে প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছিলেন কুইজ মাস্টার। প্রশ্নোত্তর পর্ব চলছিল স্পিকার লাগিয়ে। সেখানে যখন বিশেষ অতিথি হিসেবে ভারতীয় বোলার উমরান মালিক এসে উপস্থিত হয়েছেন, তখন উচ্ছ্বাস পৌঁছে যায় উচ্চগ্রামে।

এই স্টলের সামনেই গিল্ডের কার্যালয়। তাদের কানেও পৌঁছেছে শব্দদূষণের অভিযোগ। এবং নিশ্চই শব্দের দাপট! মেলায় হাঁটতে গেলে চোখে পড়েছে কলকাতার একটি বড় দৈনিকের ব্যানারে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের স্টল। সেখানেও চলছিল প্রতিযোগিতা, অবিমিশ্র বাংলা বলার লড়াই। সেখানেও ঘোষক ও প্রতিযোগীরা মাইকে উচ্চগ্রাম ঘোষণা করছিলেন। 

এ ছাড়াও এবার মুক্তমঞ্চ ছিল তিনটি যেখানে দুপুর থেকেই চলত অনুষ্ঠান। গিল্ডের ঘোষণা, গান, বহু মানুষের গুঞ্জন, মুক্তমঞ্চের অনুষ্ঠানের সঙ্গে স্টলে স্টলে প্রতিযোগিতা-- এ সবের যোগফলে সন্ধ্যার পর থেকে রাত আটটা পর্যন্ত মেলার কোনো কোনো অংশে একেবারে জগঝম্প! 

‘তীব্র শব্দ ও আলোয় অসুবিধা হয় প্রাণিকুলের’

প্রকাশকদের একাংশ এতে বিরক্ত হয়েছেন, কিন্তু প্রতিকার পাননি। ট্রাভেল রাইটার্স ফোরাম-এর পক্ষে রথীন চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''গিল্ডের ঘোষণায় অসুবিধা হয়নি। কিন্তু যখন স্টলে স্টলে জোরে বক্স বাজছিল, তখন সমস্যা হয়েছে।''

লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়নের পাশেই ছিল মৃণাল সেন মুক্তমঞ্চ। দুপুর থেকেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গানবাজনার সময় পাঠকের কথা বিক্রেতা শুনতে পাচ্ছিলেন না। নৈহাটি থেকে আসা সম্পূর্ণা বিশ্বাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''বইয়ের বিষয়ে দু'টি কথা বলার উপায় নেই। ফোন নম্বর নিলাম। পরে কথা বলব।'' পরিবেশকর্মী নব দত্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানও মেলায় শব্দসীমা মানেনি। অন্যদের কথা ছেড়ে দিলাম। গিল্ড, পুলিশকে জানিয়েও লাভ হয়নি।''

সাউন্ড লিমিটারের কথা বলা হলেও এই পরিস্থিতি কেন? অন্যতম আহ্বায়ক শুভঙ্কর দে নিজেও বড় প্রকাশনা সংস্থার কর্তা। অভিযোগ পেয়ে তারা সংশ্লিষ্ট স্টল পরিচালকদের সাউন্ড কমাতে বলেছিলেন বলে তিনি জানান। শুভঙ্কর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''আমরা অভিযোগ পেয়েছিলাম যে ক্রেতা-বিক্রেতা পরস্পরের কথা শুনতে পাচ্ছেন না। সকলকেই অনুরোধ করেছি যাতে শব্দসীমা লঙ্ঘন না করা হয়। ভবিষ্যতে বিষয়টায় আরো নজর দেওয়া হবে।''

পরের বছর শব্দের দাপাদাপি থেকে পাঠক-ক্রেতা থেকে প্রকাশকরা মুক্তি পাবেন, এই আশা নিয়ে বইমেলা শেষ হয়েছে। কিন্তু বছরের ৩৬৫ দিন শহরের নানা ধরনের শব্দদানবের যে উৎপাত, তা থেকে মুক্তি কীভাবে মিলবে? উৎসবের জন্য হাতে গোনা কয়েকটি দিন বাদ দিলেও রোজ রাজপথে গাড়ির হর্নে সাধারণ মানুষের কান যে ঝালাপালা!

সমস্যার সমাধানে পথে নেমেছে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ। সম্প্রতি শহরের বিভিন্ন স্থানে 'নো হংকিং' অভিযান চালায় তারা। অকারণে হর্ন বাজানোর জন্য অনেক বাইক ও গাড়ির চালককে জরিমানা করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, স্কুল ও হাসপাতালের সামনে হর্ন বাজানোর প্রবণতা কমাতে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে।

শুধু মানুষ নয়, অন্যান্য পশু-পাখি-পতঙ্গের উপরও প্রভাব পড়ে শব্দের। রাজ্য জীববৈচিত্র পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোককান্তি সান্যাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''তীব্র শব্দ ও আলোয় অসুবিধা হয় প্রাণিকুলের। বিশ্বজুড়ে অনেক সমীক্ষায় এটা দেখা গিয়েছে।''

কলকাতায় সবুজ আছে ইতস্তত। কিন্তু চড়ুই, বুলবুলি, ফিঙে হারিয়ে যাচ্ছে। পুজো হোক বা বই নিয়ে উৎসব, এই দিনগুলি বাদ দিলে বাকি সময়টা কি বাড়তি শব্দকে বিদায় দেয়া যায় না? সকলেই বলছেন, পুলিশি নজরদারি বা জরিমানা নয়, মানুষের সচেতনতাই পারে শব্দ দানবকে হারাতে।