1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিনেপাল

ইউক্রেনে যুদ্ধরত তরুণদের নিয়ে নেপাল সরকারের উদ্বেগ

২১ ডিসেম্বর ২০২৩

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছেন নেপালিরা৷ যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ছয় জন৷ এ খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল৷

https://p.dw.com/p/4aRcx
নেপালের কয়েকজন সেনাসদস্য (ফাইল ফটো)
নেপালের কয়েকজন সেনাসদস্য (ফাইল ফটো)ছবি: Amit Machamasi/NurPhoto/picture alliance

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া৷ সেই থেকে চলছে প্রায় সারা বিশ্বের অর্থনীতিকে নাড়িয়ে দেয়া এক যুদ্ধ৷

যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনে হামলা চালানোর জন্য জাতি সংঘের নিন্দা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় নেপাল৷ অথচ সেই দেশ থেকেই কিনা রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে অংশ নিতে দেশ ছেড়েছেন অনেক তরুণ!

গত ৪ ডিসেম্বর নেপালের গণমাধ্যম জানায়, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত রুশ বাহিনীতে যোগ দিয়ে ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ছয়জন নেপালি৷ এক সপ্তাহ পর নেপালের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে সেই খবরের বিস্তারিত৷ দ্য কাঠমান্ডু পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল বলেন, ‘‘ইউক্রেনের সেনাবাহিনী যে (রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে অংশ নেয়া) কিছু নেপালিকে বন্দি করে রেখেছে- এমন তথ্য আমরা সরকারিভাবে পেয়েছি৷ নেপালিরা ইউক্রেনের্ সেনাবাহিনীর হয়ে কাজ করছে- এমন তথ্যও পাওয়া গেছে৷ ভ্রমণ বা পড়াশোনা করার ভিসা নিয়ে রামিয়ায় যাওয়া কিছু নেপালিকে রুশ সেনাবাহিনীতে নেয়া হয়েছে৷তাদের মধ্যে ছয়জন মারা গেছেন৷ সদ্য পাওয়া খবর অনুযায়ী, এই মুহূর্তে দুশ'র বেশি নেপালি রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সেবায় নিয়োজিত৷ এটা আমাদের জন্য নতুন এবং কঠিন এক চ্যালেঞ্জ৷''

নেপালের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তা দীপেন্দ্র বাহাদুর সিং অবশ্য মনে করেন কঠিন হলেও আলোচনার মাধ্যমে এ সংকট  মোকাবেলা করা সম্ভব, ‘‘ (ইউক্রেন)যুদ্ধ নিয়ে এই মুহূর্তে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা শুধু নেপাল এবং রাশিয়া আর নেপাল এবং ইউক্রেনের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ের আলোচনার মাধ্যমেই নিরসন করা সম্ভব৷ রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকদের রক্ষা করা৷ তবে রাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া এবং যুদ্ধের ঝুঁকি অগ্রাহ্য করে ভিনদেশের সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া যে অবৈধ এটা তাদেরও (নাগরিক) বুঝতে হবে৷''

নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
১৯৪৭ সালের এক চুক্তির আওতায় প্রতি বছর ভারত এবং ব্রিটেনের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন নেপালিরাছবি: Manish Swarup/ASSOCIATED PRESS/picture alliance

ভারত ব্রিটেনের সেনাবাহিনীতে নেপালি সেনা

এমনিতে নেপালিদের অন্য দেশের সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে৷ বিশেষ করে ভারত ও ব্রিটেনের সেনাবাহিনীতে নেপালিরা যোগ দিয়ে আসছে ১৯৪৭ সাল থেকে৷ তবে ওই দুই দেশের সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার বিষয়টি ঐতিহাসিক এক ত্রিপাক্ষিক চুক্তির ফল৷ ১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের সময় ভারত ও ব্রিটেনের সেনাবাহিনীতে কর্মরত গুর্খা সেনাদের অধিকার রক্ষার্থে তিন দেশের মধ্যে এক চুক্তি সাক্ষরিত হয়৷ সেই চুক্তির ধারাবাহিকতায় এখনো প্রতিবছর ভারত ও ব্রিটেনের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন নেপালিরা৷

তবে রাশিয়ার সঙ্গে নেপালের সেরকম কোনো চুক্তি হয়নি৷ তা সত্ত্বেও গোপনে নাগরিকদের একাংশের রাশিয়ায় গিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেয়ার খবরে নেপাল সরকার উদ্বিগ্ন৷ এক বিবৃতিতে নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নেপালের যেসব নাগরিক রাশিয়া বা ইউক্রেনের হয়ে যুদ্ধ করতে গেছেন, তারা কার্যত অবৈধ কাজ করেছেন, কারণ, এই দুটি দেশের সঙ্গে নেপালের সেরকম কোনো চুক্তি নেই৷ বিবৃতিতে জানানো হয়, নেপালিদের আর রণাঙ্গণে না পাঠিয়ে অবিলম্বে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য মস্কোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পুষ্প কমল দাহালের সরকার৷

এদিকে সম্প্রতি রাশিয়া থেকে নেপালে ফিরেছেন কয়েকজন৷ স্থানীয় গণমাধ্যমকে তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধের আগে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি৷ তাদের আরো দাবি, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধে নামলেও রুশ সরকার অনেক মাসে তাদের বেতনও দেয়নি৷

দিবাকর রাই (কাঠমান্ডু)/এসিবি