1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আন্তর্জাতিক নারী দিবস

৮ মার্চ ২০১২

মাত্র ১২ বছর বয়সে বিয়ে, তারপর ১৫টি সন্তানের মা হয়েও জারিফা কাজিজাদেহ্ ট্র্যাক্টর ও মোটরসাইকেল চালান, সঙ্গে থাকে একে-৪৭৷ আফগানিস্তানের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে যাকে একটা বিপ্লব বলা চলে৷

https://p.dw.com/p/14GYd

গ্রামের দায়িত্ব

গোটা দেশে একমাত্র নারী হিসেবে নিজের গ্রামের মোড়লের দায়িত্ব পালন করেন জারিফা৷ মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে খোঁজখবর নেন তিনি৷ উত্তরে মাজার-ই-শরিফ এলাকার সেই গ্রামে প্রায় হাজার খানেক পরিবারের বসবাস৷ একজন নারী মোটরসাইকেল চালিয়ে বেড়াচ্ছেন – এমন দৃশ্য দেখে গ্রামের মানুষের বিস্ময় এখনো কাটে নি৷ কিন্তু তারাই যে জারিফা'কে মোড়ল বানিয়েছেন! জারিফা বললেন, ‘‘মানুষ দেখেছে, আমি কীভাবে তাদের কাছে বিদ্যুৎ নিয়ে এসেছি, একটি মসজিদ বানিয়ে দিয়েছি এবং সব সময়ে তাদের পাশে রয়েছি৷ অথচ এর আগে আমার কোনো রাজনৈতিক পদ ছিল না৷ আমি তাদের সাহায্য করেছি বলে তারা আমাকে মোড়ল হিসেবে নির্বাচন করেছে৷''

তালেবানের পতনের পর থেকে জারিফা গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রায় উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন৷ বিশেষ করে নারীদের অধিকারের বিষয়টিকে তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছেন৷ এক নারী গ্রামের মোড়ল হয়েছেন, এই বিষয়টি অনেক পুরুষেরই অবশ্য পছন্দ হচ্ছে না৷ তাতে জাফিরার কিছুই এসে যায় না৷ তিনি নিজের অবস্থানে অটল রয়েছেন৷ জারিফার ভাষায়, ‘‘আমি যখন মোড়ল হিসেবে কাজ শুরু করেছিলাম, তখন অনেক পুরুষ আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো৷ তাদেরকে আমি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজের শারীরিক শক্তির প্রমাণ দিয়েছিলাম৷ এখন আর কেউ আমাকে নিয়ে হাসার সাহস পায় না৷ কেউ কেউ আমাকে খুন করার চেষ্টাও করেছে, তবে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, যে আমি এখনো বেঁচে আছি৷''

নারীদের কাছের মানুষ

গ্রামের নারীদের কাছে জারিফার কদর কম নয়৷ কারণ এখন নারীরাও পুরুষদের সঙ্গে মসজিদে একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন৷ দেশের অন্যান্য প্রান্তে নারীদের মসজিদে যাবার ঘটনা বিরল৷ এবিষয়ে জারিফা বলেন, ‘‘মসজিদ নিয়ে আমাদের কম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় নি৷ আগে আমাদের নামাজ পড়ার সময় আলাদা থাকতে হতো৷ পুরুষদের নামাজ পড়া শেষ হলে আমরা, নারীরা একটা পর্দা টাঙিয়ে তারপর নামাজ পড়তাম৷ আর আজ পুরুষ নারী একসঙ্গেই মসজিদে নামাজ পড়তে পারে৷''

জারিফা মনে করেন, পুরুষ ও নারীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলা উচিত৷ সেকারণেই তাদের নিজেদের জীবন নিজেদেরই গড়ে তুলতে হবে৷ তিনি নিজে মাত্র পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত স্কুলে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন৷ কিন্তু আধুনিক যুগ সম্পর্কে জারিফা'র ধারণা কম নয়৷ তিনি বললেন, ‘‘১২ বছর বয়সে আমার বিয়ে হয়েছিল৷ তারপর আর স্কুল যেতে পারি নি৷ তবে ক্লাসে আমিই সবার সেরা ছিলাম৷ যথেষ্ট শিক্ষা না পাওয়ায় এখন কোনো মিটিং'এ আমি যখন ভাষণ দিতে পারি না, তখন খুব খারাপ লাগে৷ আমার বুক ফেটে যায়৷''

অন্যের স্বপ্ন পূরণ

আরও পরে বিয়ে হলে পড়াশোনা শেষ করে বিচারক হবার ইচ্ছা ছিল জারিফা'র৷ নিজে সেটা না পারলেও অন্য নারীদের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করতে চান তিনি৷ মোটরসাইকেল, ট্র্যাক্টর – যা পান তাতে চেপে বেরিয়ে পড়েন৷ নারী হয়ে গাড়ি চালানো? এটা কোনো সমস্যাই নয়৷ একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল তাঁর৷ ‘‘একবার একটা গাড়ি গর্তে পড়ে গিয়েছিল৷ তখন আমি এক ট্র্যাক্টর চালককে ঘাবড়ে দিয়ে চালকের আসনে বসে পড়েছিলাম৷ সে চিৎকার করে বলতে লাগলো, মেয়েরা কি গাড়ি চালাতে পারে না কি!  আমি তাকে মুখ বন্ধ রাখতে বললাম৷ তারপর গর্ত থেকে গাড়িটি টেনে তুললাম৷ সবাই চোখ বড় করে আমার কাণ্ড দেখতে লাগলো৷''

জারিফা নিজের কাজের স্বীকৃতিও পেয়েছেন৷ আফগানিস্তানের সরকার ১৮ বার তাকে বিভিন্ন সম্মান দিয়েছে৷ কিন্তু এখনো অনেক কাজ বাকি৷ জারিফা জাতীয় সংসদের প্রার্থী হতে চান৷ যা অনেকটা মোটরসাইকেলে চেপে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার মতো৷

প্রতিবেদন: ওয়াসলাত হসরত-নাজিমি / সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য