‘৫৭ ধারা নিপীড়নের হাতিয়ার!'
১ এপ্রিল ২০১৪নিলয় নীল মুক্তমনা ব্লগে ঐ দিনের ঘটনা বর্ণনা করেছেন এভাবে, ‘‘চট্টগ্রাম কলেজের দুই মেধাবী ছাত্র রায়হান রাহী ও উল্লাস দাস৷ তারা এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী৷ পরীক্ষার জন্য প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে রবিবার কলেজের যাওয়ার সময় ধর্মানুভূতির অভিযোগে তাদের উপর হামলা করে জামাত-শিবির৷''
তিনি লিখেছেন, ‘‘পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ব্লগ ও ফেসবুকে তাদের লেখা মন্তব্য বিকৃত করে ৫ পৃষ্ঠার একটি লিফলেট জনগণের মধ্যে বিলিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করা হয়৷ নাস্তিক্যবাদ প্রচারের অভিযোগে ঐ এলাকার ধর্মান্ধ জনগণকে সাথে নিয়ে প্রচণ্ড মারধোর করা হয়৷ গণধোলাই এর একপর্যায়ে মুমূর্ষু রায়হান ও উল্লাসকে উদ্ধার করে পুলিশ৷ তাদের দুজনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়৷ পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়, উত্তেজিত ধর্মান্ধ জনতার ঢল নেমে আসে থানায়৷ তাদের দাবি, ৫৭ ধারায় জামিন অযোগ্য অপরাধ করেছে রাহী ও উল্লাস৷ তাই এই ধারায়ই মামলা করতে হবে৷ উত্তেজিত ধর্মান্ধ জনতার চাপে পুলিশ নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়৷''
নিলয় লিখেছেন, ‘‘রাহী এবং উল্লাস পরিচিত মুখের সেলিব্রেটি টাইপের কেউ নয়৷ কোনো উল্লেখযোগ্য ব্লগে লেখালেখি করতেও তাদের দেখিনি৷ কিন্তু রাহী ও উল্লাস উভয়েই বাঁশেরকেল্লার ফারাবির সাথে দীর্ঘ সময় বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্ক করেছে একথা একেবারেই স্পষ্ট৷ এছাড়াও ফারাবির বিভিন্ন লেখায় বিভিন্ন সময়ে উল্লাস ও রাহীকে যুক্তিতর্ক করতে দেখা যায়৷''
ইস্টিশন ব্লগে সুমিত চোধুরী লিখেছেন, ‘‘জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে লেখা এবং নাস্তিকতাবাদ প্রচারের অভিযোগে গতকাল সকালে চট্টগ্রাম কলেজের দুই ছাত্র রাহি এবং উল্লাসকে ব্যাপক মারধোর করেছে জামাত-শিবির৷ প্রায় ৫ থেকে ৬ পাতার একটি প্রচার-পত্র তারা বানায়৷ যেখানে প্রথম মন্তব্যটি যে কোনো মানুষকে ভড়কে দিতে যথেষ্টই নয় বরং তার চাইতেও বেশি৷''
সুমিত জানিয়েছেন, রাজনৈতিক বিভিন্ন মহলের সাথে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাননি৷ কেননা পুলিশের কাছে তদবির করা মাত্রই পুলিশ ঐ প্রচার-পত্রটি দেখিয়ে দিচ্ছে! ফলে ব্যাপক অসহায় হয়ে পড়েছে রাহি এবং উল্লাসের পরিবার৷ তিনি সবচেয়ে বিস্মিত হয়েছে উল্লাসের পরিবারের উকিলের ব্যবহারে৷ লিখেছেন, ‘‘ঐ উকিল স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি আর এই মামলা লড়বেন না, কেননা উল্লাস তার ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলেছে৷''
সুমিত উল্লেখ করেছেন অনেক বছর যাবৎ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বেশ আরাম-আয়েশে আর প্রভাবের সাথেই আছে কুখ্যাত সন্ত্রাসী শিবির নাছির৷ সেখানে গিয়ে এই ছেলে দুটোর কি অবস্থা হবে তা ভেবে শিউরে উঠছেন তিনি একই সাথে আতঙ্ক বোধ করছেন৷ লিখেছেন, নিজেকে বড় অসহায় মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে! আর কিছু না হোক অন্তত তাদের বয়েসটা বিবেচনা করা দরকার ছিল বিচারকের...
গ্লোবাল ভয়েসে'স অ্যাডভোকেসি ব্লগে রেজওয়ান লিখেছেন, চট্টগ্রাম কলেজের দুই শিক্ষার্থী ব্লগারকে ইসলামি ছাত্র শিবিরের কর্মীরা মিথ্যা অভিযোগে মারধোর করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে৷ অথচ বাংলাদেশের মূল ধারার পত্রিকাগুলো এ নিয়ে কোনো প্রতিবেদন করেনি৷
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাসেল পারভেজ ফেসবুকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন৷ লিখেছেন,
অনলাইনভিত্তিক পত্রিকা বাংলানিউজ কিংবা বিডিনিউজ২৪ডটকমের কোথাও টুকরো সংবাদ হিসেবেও আসেনি, কিন্তু চট্টগ্রামের দুইজন ব্লগার-ফেসবুকারকে ৫৭ ধারায় আটক করা হয়েছে৷ তারা এইচএসসি পরীক্ষার্থী৷ ৫৭ ধারায় যদি এই ছাত্রকে আটক রাখে পুলিশ, তবে ছেলে দুটোর জীবন থেকে একটা বছর হারিয়ে যাবে৷
তিনি আরো লিখেছেন, ‘‘৫৭ ধারার মতো অসংজ্ঞায়িত আইন প্রতিনিয়ত নির্যাতন নিপীড়নের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে৷ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনকে আরও বেশি কার্যকর করে তুলতে হলে এটার গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন প্রয়োজন৷ আইনজীবীদের ভেতরেও এর কোনো দ্বিমত নেই কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাধবে কে?''
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ