হাঁড়িচাচার চোর অপবাদ ঘুচল
২১ আগস্ট ২০১৪যে সব বিজ্ঞানীরা জীবজন্তুর আচার-ব্যবহার নিয়ে চর্চা করেন, তারা বলছেন, ম্যাগপাইরা ‘ক্লেপ্টোম্যানিয়াক' তো নয়ই, বরং তারা অচেনা বস্তু দেখলে ভয় পায়৷ পরীক্ষা চলে ব্রিটেনের এক্সেটার ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে, পেষা এবং বুনো হাঁড়চাচাদের নিয়ে৷ বিজ্ঞানীরা চকচকে ও ম্যাটম্যাটে, দু'ধরনের বস্তু রেখে দেখেন, হাঁড়িচাচারা কি বলছে থুড়ি করছে৷ অবশ্য ‘বলছে' বললেও কোনো ভুল হতো না! ম্যাগপাইদের হাঁড়িচাচা নামই হয়েছে তাদের ডাকের কল্যাণে: শুনলে মনে হবে যেন ঝিনুক দিয়ে হাঁড়ি চাঁচাঁ হচ্ছে৷
যাই হোক, যে সব বস্তু রাখা হয়েছিল, সেগুলির মধ্যে ছিল স্ক্রু আর কুণ্ডুলি পাকানো কয়েল: তাদের অর্ধেককে ম্যাটম্যাটে রঙ দিয়ে পেইন্ট করে ম্যাটম্যাটে করে দেওয়া হয়েছিল; বাকিগুলো ছিল নতুন, চকচকে৷ এছাড়া ছিল কিছুটা অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েল৷ আর সবকিছুর মাঝে ডাঁই করে রাখা ছিল ম্যাগপাইদের প্রিয় খাদ্য: নানা ধরনের বাদাম৷
৬৪ বার পরীক্ষা করে দেখা গেল, ম্যাগপাইরা মাত্র দু'বার একটা চকচকে জিনিস ঠোঁটে তুলে নিয়েছে৷ দু'বারেই তারা একটি রুপোর আংটি তুলেছে এবং তুলেই আবার ফেলে দিয়েছে৷ বিজ্ঞানীরা এ খবর দিয়েছেন ‘অ্যানিমাল কগনিশন' জার্নালে৷ চকচকে জিনিস দেখে আকৃষ্ট হওয়া তো দূরের কথা. হাঁড়িচাচাদের দৃশ্যত ‘নিওফোবিয়া' বা নতুন জিনিসে বিতৃষ্ণা আছে৷ তারা যে বাদামের ডাঁই থেকে খাচ্ছে, তার ধারেকাছে কোনো চকচকে জিনিস থাকলেই তাদের সন্দেহবাতিক দেখা দেয়৷
এ থেকে কী প্রমাণ হয়? হাঁড়িচাচাদের বিশ্বের সর্বত্র বুদ্ধিমান পাখি বলে ধরা হয়৷ ইউরোপীয় কিংবদন্তিতে তাদের আবার চুরির বাতিক আছে: বারান্দা কি জানলার কাঠে সোনাদানা রাখা থাকলে, ম্যাগপাইরা নাকি তা চুরি করে নিয়ে গিয়ে নিজেদের বাসায় রাখে৷ তাদের এই স্বভাব নিয়ে যেমন রোসিনির অপেরায় গান গাওয়া হয়েছে, তেমন টিনটিনের কমিক বইতেও ম্যাগপাইদের এই চৌর্যবৃত্তিকে কাজে লাগানো হয়েছে৷
কিন্তু এক্সেটারের পরীক্ষা প্রমাণ করছে যে, হাঁড়িচাচারা – এক কথায় – চতুর৷ চকচকে জিনিস দেখে হাঁ করে না থেকে, তারা এই ধরনের অচেনা বস্তু থেকে দূরে থাকে, নিরাপদে থাকে৷ তবে এক্সেটারের হাঁড়িচাচারা যদি এই পন্থায় বিজ্ঞানীদের বোকা বানিয়ে থাকে, তাহলে কিছু বলার নেই!
এসি/ডিজি (এএফপি)