সাইকেল চালিয়ে সুন্দর আগামীর পথে
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের আরিফওয়ালার মেয়েদের কষ্ট কমিয়ে দিয়েছে সাইকেল৷ কিছুদিন আগেও যেখানে স্কুলে যেতে অনেক ঝক্কি পোহাতে হতো, এখন দিব্যি সাইকেল চালিয়েই স্কুলে পৌঁছে যাচ্ছে তারা৷ এলাকার সবাই খুব খুশি৷
আত্মবিশ্বাসী মেয়েদের কথা
আরিফওয়ালা গ্রামের চেয়ে অগ্রসর আবার শহরের অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত এক এলাকা৷ স্কুল বেশি নেই সেখানে৷ কিছুদিন আগেও মেয়েদের অনেকটা পথ হেঁটে বা রিক্সায় চড়ে যেতে হতো স্কুলে৷ জার্মানির অর্থ সহায়তায় বেসরকারি সংস্থা ‘ইরাজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন’ মেয়েদের মাঝে সাইকেল বিতরণ করায় এখন আর সেই দিন নেই৷ আরিফওয়ালায় গেলেই দেখা যাবে, আত্মবিশ্বাসী মেয়েরা এখন দিব্যি সাইকেল চালিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে স্কুলে৷
বাবা-মা খুশি
শিক্ষিকা নাসিম আশরাফ জানালেন, জার্মা্ন সরকারের অর্থানুকূল্যে ‘ইরাজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন’ সাইকেল দেয়ায় মেয়েরা নিয়মিত স্কুলে যেতে পারছে৷ কষ্ট ও যাতায়াতের সময় কমায় লেখাপড়ায় মনযোগ বাড়ছে তাদের৷ নাসিম আরো জানান, সাইকেল দিলেও মেয়েদের বাবা-মা তাদের সেই সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসতে দেবেন কিনা এ নিয়ে শুরুতে খুব সংশয় ছিল৷ তবে কেউ আপত্তি করেননি৷ মেয়েদের স্কুলে যাতায়াতে সুবিধা দেখে সব বাবা-মাই খুশি৷
‘এই যুগে সাইকেলে কী সমস্যা?’
রাবিয়া প্রতিদিন সাইকেল চালিয়েই স্কুলে যায়৷ তার বাবা জামাল দীন তাতে খুশি৷ আগে মেয়েকে তিনি রিকশা করে স্কুলে পাঠাতেন৷ সাইকেল পাওয়ায় রিকশাভাড়ার টাকাটা জমানো যাচ্ছে৷ জামাল দীন তো খুশি হবেনই! তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘মেয়ে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায় বলে এলাকার লোকজন কিছু বলে?’ জামাল দিন পাল্টা প্রশ্নে জানতে চাইলেন, ‘‘আজকাল কত মেয়ে মোটর সাইকেল চালাচ্ছে, এই যুগে সাইকেল চালালে কী সমস্যা?’’
এগিয়ে যাচ্ছে ২১০টি সাইকেল
‘ইরাজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন’-এর কো-অর্ডিনেটর খালিদ ফারুক জানালেন, এ পর্যন্ত ২১০ জন ছাত্রীকে সাইকেল দেয়া হয়েছে৷ সাইকেল নেয়ার আগে প্রত্যেক ছাত্রীর বাবা লিখিতভাবেই সম্মতি জানিয়েছেন৷
অনুকরণীয়
স্থানীয় এক মসজিদের ক্বারি মোহাম্মদ আফজাল মেয়েদের সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়ার মধ্যে আপত্তির কিছুই দেখেছেন না৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বললেন, ‘‘রোদ-বৃষ্টির মধ্যে কষ্ট করে না গিয়ে মেয়েরা নিজে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাবে, এতে আবার আপত্তি কিসের?’’ তাঁর নিজের মেয়েও তাই সাইকেল চালিয়েই স্কুলে যায়৷
সাইকেলে চড়ে সুন্দর আগামীর পথে
এক স্কুলছাত্রীর বাবা বললেন, ‘‘দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে আমি আমার মেয়েকে লেখাপড়া শেখাতে চাই৷ আমি চাই ও লেখাপড়া শিখে আমাদের চেয়ে উন্নত জীবনযাপন করুক৷’’ আরিফওয়ালার মেয়েরা এখন তেমন সম্ভাবনাময় জীবনের পথের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে৷