যক্ষ্মার সঙ্গে লড়তে ‘নায়ক ইঁদুর’!
ফসলের ক্ষতি করে বলে ‘ইঁদুর নিধন অভিযান’-এর কথা আমরা হামেশাই শুনি৷ কিন্তু মানুষের যক্ষ্মা রোগ সারাতে ইঁদুরের সহায়তা নেয়া হয়, তা কি শুনেছেন? তানজানিয়ায় কিন্তু এমন কাণ্ডই চলছে৷
চিনে নিন নায়ক ইঁদুরকে
টিউবারকুলোসিস, অর্থাৎ টিবি বা যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ে সহায়তার জন্য বেলজিয়ান বেসরকারি সংস্থা আপোপো বিশেষ প্রজাতির ইঁদুরের প্রজনন করাচ্ছে৷ আফ্রিকার এই ধরনের ইঁদুরের নাম দেয়া হয়েছে ‘গিলবার্ট’৷ তানজানিয়ার মোরোগোরো শহরের পরীক্ষাগারে এক চৌকোনা খাঁচায় মানুষের থুথুর নমুনা রাখা হয়৷ গিলবার্টরা গন্ধ শুঁকেই জানিয়ে দেয় থুথুতে সংক্রমণ হয়েছে কিনা৷ এমন চল্লিশটি ‘নায়ক ইঁদুর’ আছে সেই পরীক্ষাগারে৷
ইঁদুরেরও চাই প্রেরণা
সংক্রমণ সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে এমন থুথুর নমুনায় গিলবার্ট যতবার তার সামনের থাবা দিয়ে আঁচড় কাটে, ততবারই তাকে পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয় কলা আর মটরশুঁটি মেশানো খাবার৷ খাবার পেলে নতুন উদ্যমে আবার কাজ শুরু করে গিলবার্ট৷
গিলবার্টরা আরো জানে...
শুধু যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়েই নয়, মোজাম্বিক, অ্যাঙ্গোলা এবং কম্বোডিয়ার মতো দেশে ভূমি মাইন খুঁজে বের করায় সহায়তার জন্যও গিলবার্টদের কাজে লাগায় আপোপো৷ সামান্য এক ইঁদুরের সহায়তা নিয়ে শুধু মোজাম্বিকেই ২ হাজার ৫৮৭টি ভূমি মাইন খুঁজে বের করে ধ্বংস করা হয়েছে৷ এছাড়া এক হাজারেরও বেশি এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস আর প্রায় ১৩শ আগ্নেয়াস্ত্র এবং গোলাবারুদেরও সন্ধান দিয়েছে এই ইঁদুর৷
পয়সা উসুল...
আফ্রিকার এই ইঁদুরের ঘ্রাণশক্তি ভীষণ তীক্ষ্ম৷ অন্যান্য ইঁদুরের তুলনায় এরা বেশ শান্ত স্বভাবের৷ প্রতিটি ইঁদুরের প্রশিক্ষণের পেছনে গড়ে ৬শ ইউরোর মতো খরচ হয়৷ তাতে কী! এ ইঁদুর আট বছর বাঁচে৷ এদের পোষ মানানো সহজ, পুষতে তেমন কোনো ঝামেলাও নেই৷ সবচেয়ে বড় কথা, কুকুরকে যেমন একজন প্রশিক্ষক দিয়েই সব শেখাতে হয়, গিলবার্টদের তেমন বায়নাক্কাও নেই৷
জন্ম থেকেই শুরু
আপোপো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজেদের জায়গাতেই ইঁদুরের প্রজনন করায়৷ সংস্থাটি বুনো ইঁদুর পেলেই তাদের দিয়ে শুরু করে বংশ বৃদ্ধির কাজ৷ বাচ্চা ইঁদুর জন্মের পর চোখ খোলার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় প্রশিক্ষণ৷
গিলবার্ট যেভাবে বাঁচায়
সাভেরা কম্বা-র কাশি আর সারছিলই না৷ শরীরের ওজন কমে যাচ্ছিল৷ সবসময় ক্লান্ত লাগতো৷ হাসপাতালে ডাক্তাররা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বললেন, যক্ষ্মা হয়নি৷ অগত্যা থুথুর নমুনা পাঠানো হলো৷ গিলবার্ট শুঁকেই জানিয়ে দিল, যক্ষ্মা হয়েছে৷ যেন নতুন জীবন পেলেন তিনি৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)-র এক সমীক্ষা অনুযায়ী শুধু ২০১২ সালেই সারা বিশ্বে যক্ষ্মায় মারা গেছে ১৩ লাখেরও বেশি মানুষ৷সাভেরাকে বাঁচিয়েছৈ ইঁদুর৷
নিশ্চিত হওয়া
হাসপাতালের পরীক্ষায় যক্ষ্মা ধরা পড়েনি, কিন্তু ইঁদুরের নাসিকায় ধরা পড়েছে, রোগীদের এমন থুথু আবার পরীক্ষা করে দেখছেন আপোপো ল্যাব-এর প্রশিক্ষিত কর্মীরা৷ পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পর রোগীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে বলা হবে৷
চটপটে গিলবার্ট
আপোপো-র ইঁদুরগুলোর বিশেষত্ব কী জানেন? ওরা খুব দ্রুত কাজ করে৷ ল্যাবরেটরিতে একজন মানুষ সারাদিনে যতগুলো থুথুর নমুনা পরীক্ষা করতে পারে গিলবার্ট তা করে ফেলে মাত্র সাত মিনিটে৷ যক্ষ্মা হওয়ার ঝুঁকি বেশি এমন সব জায়গা, যেমন শরণার্থী শিবির বা কয়েদখানায় ইঁদুর দিয়ে পরীক্ষা করালে মন্দ কি!
চিকিৎসা শুরু
সাভেরা কম্বার ওজন এখনো মাত্র ৩৯ কেজি৷ তবে ওষুধ খেতে শুরু করার পর থেকে শারীরিক অবস্থার উন্নতি নিজেই বুঝতে পারছেন, তাই খুব খুশি মনেই ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘ইঁদুর না থাকলে আমি হয়ত মারাই যেতাম!’’
তবু স্বীকৃতি নেই
ইঁদুর দিয়ে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ের এই পদ্ধতিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো স্বীকৃতি দেয়নি৷ গত বছর তানজানিয়ায় মোট ১৭শ রোগীর সুচিকিৎসা সম্ভব হয়েছে প্রশিক্ষিত ইঁদুরদের কল্যাণে৷ আপোপো তাই ডাব্লিউএইচও-র স্বীকৃতির আশায় বসে নেই৷ তানজানিয়ার পর মোজাম্বিকেও একটি যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় কেন্দ্র খুলেছে৷ ভবিষ্যতে দক্ষিণ আফ্রিকাতেও এমন পরীক্ষাগার চালু করার পরিকল্পনা আছে আপোপোর৷