মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় যোগাযোগ প্রযুক্তির বিস্তার চায় যুক্তরাষ্ট্র
৯ মার্চ ২০১০ফেসবুক, টুইটারের গুরুত্ব
ইন্টারনেট প্রযুক্তি এবং ফেসবুক কিংবা টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কগুলোর বহুল জনপ্রিয়তা এবং সাম্প্রতিক নানা সংকটের সময়ে বিকল্প গণমাধ্যম হিসেবে এসবের বহুল ব্যবহার দেখেই এ বিষয়ে উৎসাহিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনোত্তর রাজনৈতিক বিক্ষোভের সময়ে সহিংসতার ছবি ও খবরাখবর বহির্বিশ্বে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ইন্টারনেট এসব নেটওয়ার্কিং সাইট৷
মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্ত
এ লক্ষ্য অর্জনে ইরান, সুদান এবং কিউবার ওপর বিদ্যমান বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা কিছু ক্ষেত্রে শিথিল করছে যুক্তরাষ্ট্র৷ দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পর অর্থ মন্ত্রণালয় সোমবার এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চেয়েছে ‘গুগল' এবং ‘মাইক্রোসফট' এর মতো কোম্পানিগুলো যাতে এসব দেশে বিনামূল্যে এসব যোগাযোগ সফটওয়্যার রপ্তানি করতে পারে৷
যুক্তরাষ্ট্রের উপ অর্থমন্ত্রী নিল ওলিন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘আজ এই সিদ্ধান্তের ফলে ইরান, সুদান এবং কিউবার নাগরিকরা তাদের সবচেয়ে মৌলিক অধিকার চর্চার সুযোগ পাবেন৷''
দায়বদ্ধতার প্রশ্ন
ওদিকে, যুক্তরাষ্ট্র যখন রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এই অবাধ বিস্তারের পক্ষে পদক্ষেপ নিচ্ছে ঠিক সেই সময়েই প্রশ্ন উঠছে এসব প্রযুক্তির সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে৷ মানুষ চায় এই স্বাধীনতার অপব্যবহারের জন্য কেউ না কেউ দায়বদ্ধ থাকুক, যাতে সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক কিংবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তারা এর জবাবদিহিতা বা ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে৷ আজকাল এমন সব আইনি বিপাকে পড়ে যাচ্ছে ইন্টারনেট জায়েন্ট গুগল এবং সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ফেসবুক৷
ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ইটালির একটি আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন গুগলের তিন নির্বাহী৷ গুগলে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে এক শ্রবণপ্রতিবন্ধী কিশোরকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে আদালতে৷ মিলানের আদালত রায় দেয় এই ভিডিওর মাধ্যমে ওই কিশোরের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং এই অপরাধের দায় শেষপর্যন্ত বর্তায় গুগলের তিন কর্মকর্তার ওপর৷
এই রায়ের ফলে আঁতকে ওঠে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী সংস্থা এবং কোম্পানিগুলো৷ জনপ্রিয় ব্লগ ‘বাজমেশিন'-এ সাংবাদিক জেফ জার্ভিস বলেন, ইটালির আদালতের এই রায়ের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবাপ্রদানকারী সংস্থার কাছ থেকে যে জবাবদিহিতা চাওয়া হল এর ফলে আর কেউই আর তাদের নিজস্ব সেবায় কাউকেই কোনো ভিডিও বা এমনকিছু পোস্ট করতে দিতে চাইবেন না৷ কেননা এতে যে ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে তা অকল্পনীয়৷
উভয় সংকট
গুগল-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং জেনারেল কাউন্সেল এক ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, তাঁর কোম্পানি ইটালির আদালতে রায়ের ফলে ‘‘মারাত্মক সমস্যায়'' পড়েছে এবং এই রায় আদতে ‘‘ইন্টারনেটের মৌলিক ভিত্তি যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা তার ওপরই হামলা৷''
একইভাবে সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় বিপাকে পড়েছে ফেসবুক৷ ফেব্রুয়ারি মাসে হত্যাকাণ্ডের শিকার দুই শিশু ৮ বছর বয়সি ট্রিনিটি বেটস এবং ১২ বছর বয়সি ইলিয়ট ফ্লেচার এর স্মরণে উৎসর্গ করা একটি ফেসবুক পেজ রাতারাতি পর্নো ছবিতে ছেয়ে গেলে তা তীব্র সামাজিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে৷ বিষয়টি এতোদূর গড়ায় যে এ নিয়ে কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অ্যান ব্লিঘ ফেসবুক এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও মার্ক জুকারবার্গকে একটি চিঠিও লেখেন৷
ফেসবুকের এক মুখপাত্র গণমাধ্যমকে বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী জনপ্রিয় সাইট ফেসবুক-এ এ ধরণের কোনো ছবি বা পোস্ট এর ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ করলে তা দ্রুত মুছে ফেলার সুযোগ আছে তাদের৷
এমন আরও অনেক বিতর্কই বাড়ছে ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কগুলো নিয়ে৷ তবে, অনেক বিশ্লেষকই একটা নজরদারি ব্যবস্থার কথা বললেও এ বিষয়ে একমত যে, ব্যবহারকারীরা দায়িত্ববান না হলে বা কেউ এই মুক্ত মাধ্যমের স্বাধীনতার অপব্যবহার করলে তা রোধ করা খুবই কষ্টকর৷
প্রতিবেদন : মুনীর উদ্দিন আহমেদ, সম্পাদনা : সঞ্জীব বর্মন