ঝাঁকুনি খেল বিজেপিও
২৭ আগস্ট ২০১৪গত সংসদীয় নির্বাচনে বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে দিল্লির মসনদ দখল করে৷ কিন্তু এ ঘটনার ১০০ দিনের মাথায় বিহার, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক ও পাঞ্জাবে মোট ১৮টি বিধানসভা আসনে উপ-নির্বাচনের ফলাফল বিজেপিকে সতর্ক হবার বার্তা দিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই৷
ভারতে মোদী-ঢেউ এরই মধ্যে থমকে গেছে – এ কথা বলা না গেলেও, অ-বিজেপি জোট বিজেপির দাপট সামান্য হলেও যে রুখে দিতে সক্ষম হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই৷ বিহারের ১০টি আসনের ফলাফল এক্ষেত্রে উল্লেখ্য৷ রাজ্যে গত লোকসভা ভোটে ৪০টি আসনের মধ্যে বিজেপি জোট যেখানে পেয়েছিল ৩১টি আসন, সেখানে বিজেপির ভোট-ব্যাংক কমে যাবার কারণ কী? কারণ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী শাসক দল নীতীশ কুমারের জেডি-ইউ, লালু প্রসাদের আরজেডি এবং কংগ্রেসের মহাজোট বিজেপির বিজয় রথের গতি থামাতে সব শত্রুতা ভুলে গলা জড়াজড়ি করে উপ-নির্বাচনের ময়দানে দু'দশক পর নামে শুধু জল মাপতে৷ দেখা গেল, তাদের রাজনৈতিক সমীকরণ সন্তোষজনক হয়েছে৷ ১০টি আসনের মধ্যে ছয়টিতে জিতেছে তারা৷ অর্থাৎ হারানো জমি কিছুটা হলেও উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে৷ জেডি-ইউ এবং আরজেডি নেতারা তাঁদের চিরাচরিত যাদব, দলিত, মুসলিম ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির ভোট-ব্যাংক নিজেদের দিকে টানতে সফল হয়েছে৷
মহাজোটের নেতাদের মতে, মোদীর ‘বিভেদকামী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি' থেকে মুখ ঘোরাতে শুরু করেছে দেশের মানুষ৷ কথা হলো, তিন মাসের মধ্যে এমন কী ঘটলো যে বিজেপির গতি মন্থর হয়ে গেল? বিজেপির রাজ্য নেতারা মনে করেন, বিহারে জাত-পাতের রাজনীতিই এর কারণ৷ দ্বিতীয়ত, রাজ্যের স্থানীয় ইস্যু এবং জাতীয় ইস্যু আলাদা৷ স্থানীয় ইস্যুতে মোদী ফ্যাক্টর কাজ করেনি৷ ২০১৪ সালের সংসদীয় ভোটের পর গত জুলাই মাসে হিমালয় রাজ্য উত্তরাখন্ডে বিধানসভার তিনটি আসনের উপ-নির্বাচনে সব কটি আসনই হাতছাড়া হয় বিজেপির৷ অথচ সংসদীয় ভোটে রাজ্যের পাঁচটি আসনই পেয়েছিল বিজেপি-জোট৷
উপ-নির্বাচনে নীতীশ-লালু প্রসাদের জোটের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে বিজেপির বিকল্প শক্তি হিসেবে অন্যান্য দলগুলিও এগিয়ে আসতে পারে৷ উত্তর প্রদেশে মুলায়েম সিং-এর সমাজবাদী পার্টি এবং মায়াবতির বহুজন সমাজ পার্টি হাত মেলাতে পারে৷
তবে মোদীর ঝড় একেবারে থেমে গেছে – এ কথা বলার সময় এখনো আসেনি৷ আগামী কয়েক মাসের মধ্যে হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, ঝাড়কন্ড ও জম্মু-কাশ্মীর – এই চারটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন৷ এছাড়া বিহার বিধানসভার ভোট ২০১৫ সালে৷ সেটা হবে বিজেপি সরকারের আর একটা বড় পরীক্ষা৷ বলা বাহুল্য, দলের নতুন সভাপতি অমিত শাহের ম্যাজিক কতটা কাজ করে, এবার সেটাই দেখার৷
বিজেপিকে অবশ্য মনে রাখতে হবে আত্মসন্তুষ্টির কোনো অবকাশ নেই৷ কারণ মোদী সরকারকে এখনও কাজ করে দেখাতে হবে সুশাসন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে৷