ফেসবুক, টুইটারে নজরদারি দরকার
১০ নভেম্বর ২০১৫‘রাজকাহিনী' চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য গত কয়েকদিন ধরে তুমুল আলোচনায় জয়া আহসান৷ কলকাতার ছবি ‘রাজকাহিনী'-তে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের এই সুঅভিনেত্রী৷ আলোচনা-সমালোচনা ছবিটি নিয়ে যতটা, তার চেয়ে কোটি গুণে বেশি একটি মাত্র দৃশ্য নিয়ে৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের ছড়াছড়ি৷ দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে এ খবর৷
বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় দেশভাগের পটভূমিতে নির্মিত ‘রাজকাহিনী'-র ওই দৃশ্য নিয়ে ভালো-মন্দ দু'ধরণের জনমতের কথাই এসেছে৷ একটি পত্রিকা জানাচ্ছে, ‘‘অনেকই বলছেন, জয়া আহসানের মতো একজন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া শিল্পীর এরকম দৃশ্যে অভিনয় করাটা দুঃখজনক৷ আবার কেউ কেউ বলছেন ১৯৪৭ সালেরে দেশ ভাগের প্রেক্ষাপট নিয়ে ছবি নির্মাণের কথা বলে এ সিনেমাটিতে শুধু অশ্লীলতাকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷''
জয়া আহসানও এ বিষয়ে তাঁর মত প্রকাশ করেছেন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘সমালোচকদের কথা আমি খুবই গুরুত্ব দেই৷ তাদের কাছে যদি আমার অভিনীত দৃশ্যটিকে সমালোচনার যোগ্য মনে হয় তাহলে নিশ্চয়ই বিষয়টি সেরকম কিছুই৷....তবে এ ছবিতে অভিনয় করার মানে হচ্ছে ঐতিহাসিক একটা কাজের অংশ হয়ে থাকা৷....সেটা আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়৷ অভিনয়ের জায়গাও ছিল৷ দর্শকরা দেখলে বাকিটা বুঝতে পারবেন৷''
পুরো ছবি না দেখে শুধু একটা দৃশ্যের খণ্ডিত অংশ নিয়ে যাঁরা মন্তব্যে মেতেছেন, তাঁদের মধ্যে মোটামুটি শোভনীয়তার সীমায় থাকা একটি মন্তব্য, ‘‘ছিঃ ছিঃ ছিঃ জয়া আহসান শেষ পযন্ত ইন্ডিয়ান সিনেমার জন্য এত খারাপ ভিডিও করাতে পারেন! এটা আমরা কখনোই আশা করি না৷''
এমন মন্তব্য করা যেতেই পারে৷ যাঁকে নিয়ে এমন সমালোচনা তাঁরও তা মেনে নিতে এবং এ থেকে যা বোঝার যা মানার মেনে, বুঝে নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা ঠিক করতেও আপত্তি থাকার কথা নয়৷
কিন্তু অশ্লীল, কুরুচিকর মন্তব্য, উদ্দেশ্যমূলক ভুল কিংবা মিথ্যা তথ্য প্রকাশ, সম্মানহানিকর মন্তব্যের আঘাত সহ্য করা অনেকে তো হত্যার হুমকিও পাচ্ছেন৷ হত্যার হুমকি এখনো যাঁরা পাননি, তাঁদের অনেকে যে কোনোদিন তেমন হুমকি পাওয়ার আশঙ্কা করছেন৷
আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞ নেতা সুরঞ্চিত সেন গুপ্ত সম্প্রতি জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে নিরপত্তা চেয়েছেন৷ সাবেক এই মন্ত্রীর দাবি, একটি মহল ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে তাঁর জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে৷ বলা হচ্ছে, তিনি নাকি জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণের জন্য মসজিদ বন্ধ করার কথা বলেছেন৷ অথচ তা তিনি কোথাও কোনোদিন বলেননি৷
এমন অপপ্রচার , মিথ্যা তথ্য, কুরুচিপূর্ণ ছবি প্রকাশ করে কাউকে হেনস্থা করার চেষ্টা করা নতুন কিছু নয়৷ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা যে তাঁর এক সতীর্থের বোনকে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্যের বন্যা বইতে দেখে নিজের ফ্যানপেজ বন্ধ করে দিয়েছেন, তা আমরা জানি৷
বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন যে তাঁর নামে খোলা ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্টের কারণে সামাজিকভাবে নাজেহাল হয়েছেন, সে খবর আমরা সংবাদ মাধ্যমের কল্যাণেই জেনেছি৷ চলচ্চিত্রের আরেক তারকা মৌসুমীরও ফেসবুক নিয়ে অভিজ্ঞতা খুব তিক্ত৷ নিজের সম্মান বাঁচাতে মৌসুমী সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানিয়েছেন, ফেসবুকে আমার অসংখ্য ফেক আইডি ও ফেক ফ্যানপেজ আছে৷ আইডিগুলোতে যে ধরনের পোস্ট দেওয়া হয় তা আমার কথা নয়৷ তাই আপনাদের অনুরোধ করছি, ফেক ফ্যানপেজ আর ফেক আইডি চোখে পড়লে অনুগ্রহপূর্বক ব্লক করে দেবেন৷''
নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষক-শিক্ষিকা যে পেশার দিকে তাকাবো সেই পেশা থেকেই এমন ভুরি ভুরি উদাহরণ দেয়া যাবে৷ উদাহরণগুলো দেখিয়ে বলা যাবে, ‘‘এই দেখুন, কিছু মানুষ ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকে শুধু ঘৃণা, বিদ্বেষ ছড়ানো আর অন্যের সম্মান আর প্রাণহানির জন্যই ব্যবহার করছে৷''
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকে ব্যবহার করে কোন অপরাধটা হচ্ছে না? ফেসবুক আইডি হ্যাক করে অন্যের জীবন দুর্বিসহ করে তুলছে কিছু মানুষ৷ কখনো নারী কখনো পুরুষ সেজে ভুয়া আইডি খুলে সম্পর্ক তৈরি করে অপহরণ করছে৷ ডয়চে ভেলেতেই কয়েকমাস আগে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে যার শিরোনাম ছিল, ‘সাইবার অপরাধ বেড়েই চলেছে' ৷ তারপরও কতজনের প্রাণ গেছে, কত জনের মানহানি হয়েছে সে খবর কি আমরা পুরোপুরি জানি? মিয়ানমারে মুসলমানদের ওপর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নির্যাতনের ভুয়া ছবি ও তথ্য ছড়িয়ে প্রতিশোধ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়েছে একটি মহল৷ বিদ্বেষ এখনো ছড়ানো হচ্ছে৷ হামলা, হত্যাও হচ্ছে৷সরকার অবশেষে ‘ফেসবুকের ভুয়া আইডি আইনের আওতায়' নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে কিছু মানুষের নানান অপকর্ম করার খবর আমরা পড়েছি৷ প্রধানমন্ত্রীর তো পুলিশ আছে, প্রশাসন আছে, কত শত সক্রিয় নেতা-কর্মী, সমর্থক আছে৷ তাঁর বিরুদ্ধে ফেসবুক ‘স্ট্যাটাস' লিখলে স্বপ্রণোদিত হয়ে কত লোক মামলা ঠুকে দেন৷ অভিযুক্ত গ্রেপ্তারও হয়৷
দেশের জনগণকে নিরাপদ রাখাও সরকারের দায়িত্ব৷ সাধারণ নাগরিক বলে, লেখক, প্রকাশক, শিল্পী, শিক্ষক, সাংবাদিক বা অন্য কোনো পেশাজীবী বলে কিছু মানুষ শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এক শ্রেণির দুর্বৃত্তের ‘হামলার' শিকার হয়েই যাবে, তা হতে পারে না৷
মত প্রকাশের পাশাপাশি সবার সম্মান ও অধিকার রক্ষার অধিকার থাকা উচিত – আপনি কি একমত? জানিয়ে দিন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷