প্রকৃতি ও মানুষ বাঁচাতে দেলোয়ার ও তাঁর সঙ্গীদের উদ্যোগ
কুষ্টিয়ার ছেলে দেলোয়ার জাহান ও তাঁর সঙ্গীরা মিলে ‘প্রাকৃতিক কৃষি’ নামে একটি আন্দোলন শুরু করেছেন৷ সার ও কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই কৃষকদের কৃষিকাজে উৎসাহিত করছেন তাঁরা৷
বিষমুক্ত খাবারের অঙ্গীকার
বাংলাদেশে ফসলের ক্ষেতে প্রতি মিনিটে ৭২ কেজি ‘বিষ’ ছিটানো হয় বলে জানান দেলোয়ার জাহান৷ এতে মাটির যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করে যে ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর৷ এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষিকাজ পদ্ধতিকে উৎসাহিত করছেন দেলোয়ার ও তাঁর সঙ্গীরা৷
‘প্রাকৃতিক কৃষি’ আন্দোলন
দেলোয়ার ও তাঁর সঙ্গীরা প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত৷ এর মাধ্যমে তাঁরা আশেপাশের কৃষকদের দেখান যে, এভাবেও ফসল উৎপাদন করে লাভ করা সম্ভব৷ এছাড়া কৃষকদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনায় বসে প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষিকাজের নতুন নতুন পদ্ধতি বের করেন তাঁরা৷ ছবিতে দেলোয়ারকে কৃষকদের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা যাচ্ছে৷
শুরুর কথা
২০১৩ সালে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার আমতলি গ্রামে জমি লিজ নিয়ে গ্রীষ্মকালীন সবজি উৎপাদন শুরু করেন দেলোয়ার ও তাঁর সঙ্গীরা৷ বর্তমানে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার হাজীপুর গ্রামে দেড় একর জমিতে প্রায় ৪০ রকমের সবজি উৎপাদিত হয় বলে জানান তিনি৷ উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত দেলোয়ার নিজে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে জড়িত ছিলেন৷ আর তাঁর সঙ্গীদের পরিবারও কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত৷
লেখাপড়ায় ভালো ছিলেন দেলোয়ার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে অনার্সে দ্বিতীয় ও মাস্টার্সে যৌথভাবে প্রথম হয়েছিলেন দেলোয়ার৷ এরপর সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে চাকরির সুযোগ পেয়েছিলেন৷ কিন্তু মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন ভেবে সেখানে যাননি তিনি৷ ‘প্রাকৃতিক কৃষি’র পাশাপাশি ঢাকায় একটি পত্রিকায় কৃষি বিষয়ক সাংবাদিকতা করছেন দেলোয়ার৷
সঙ্গীদের কথা
দেলোয়ারের সঙ্গে আছেন আরও কয়েকজন তরুণ-তরুণী৷ তাঁদের প্রায় সবাই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পড়ালেখা শেষ করেছেন৷ ছবিতে দুজনকে দেখা যাচ্ছে৷
সাফল্যের কথা
দেলোয়ারদের যেখানে খামার আছে, সেই মানিকগঞ্জ ছাড়াও ঝিনাইদহ, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও নওগাঁ জেলার অনেক কৃষক বর্তমানে প্রাকৃতিক উপায়ে ফসল উৎপাদন করছেন৷ ছবিতে দেলোয়ারের সঙ্গীদের ফসল তুলতে দেখা যাচ্ছে৷
পণ্যের বাজার
বিভিন্ন জেলার কৃষকদের প্রাকৃতিক উপায়ে চাষ করা সবজি, ফল ঢাকায় কিনতে পাওয়া যায়৷ এজন্য মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোডে ‘প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্র’ চালু করা হয়েছে৷ ছবিটি বিপণন কেন্দ্রের সামনে তোলা৷
যা পাওয়া যায়
কী চান? শাক-সবজি, ফল, চাল, ডাল, হাতে ভাজা মুড়ি, মসলা, তেল, ঘি, দুধ, ডিম; বলে শেষ করা যাবে না৷ মাঝেমধ্যে বাসায় চাষের কাজে ব্যবহারের জন্য প্রাকৃতিক সারও পাওয়া যায় ঐ কেন্দ্রে৷ হালনাগাদ তথ্য পেতে ‘প্রাকৃতিক কৃষি’র ফেসবুক পাতা দেখা যেতে পারে৷ এজন্য উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
নিরাপদ ফসল
ঢাকায় প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের কিষাণীরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে এসেছেন৷
গ্রামে যাওয়া হয়নি
দেলোয়ার কুষ্টিয়ার ছেলে৷ কিন্তু নিজের গ্রামে না গিয়ে মানিকগঞ্জে কাজ করার কারণ বলতে গিয়ে তিনি জানান, সেটি সম্ভব ছিল না৷ ‘‘যখন পড়ালেখা করতাম তখন গ্রামে গেলে সবাই জানতে চাইতো কতদিন আছি কিংবা কবে যাব? তখনই বুঝতে পারি যে, আসলে গ্রামে ফেরা সম্ভব না,’’ ডয়চে ভেলেকে বলেন দেলোয়ার৷
চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষিকাজ
বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে কেউ যদি উচ্চশিক্ষার পর চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষিকাজে জড়িত হয়ে জীবনযাপন করতে চায় তাহলে সেটি সম্ভব বলে মনে করেন দেলোয়ার৷ ‘‘কেউ যদি সমন্বিত খামার করেন, যেখানে মাছ চাষ থাকবে, গরু থাকবে, দুধের জন্য ছাগল থাকবে, হাঁস থাকবে, সবজি থাকবে- তাহলে সম্ভব৷’’
তবে...
দেলোয়ার বলেন, সমস্যা হচ্ছে তরুণরা মনে করে, কৃষিকাজ মানে অচ্ছুতের কাজ৷ তাই এটি কেউ করতে চায় না৷ ‘‘কারণ চারপাশে এত রং, এত প্রত্যাশা জীবনে যে, কেউ আসলে কৃষিকাজ করতে চায় না৷ প্রচুর ছেলেমেয়ে আমাদের কাছে (প্রাকৃতিক কৃষির কাজ দেখতে) আসে৷ যে পরিমাণ আগ্রহ নিয়ে আসে তার দ্বিগুণ পরিমাণ আগ্রহ নিয়ে চলে যায়’’, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানান দেলোয়ার৷