সব হারিয়ে আড়াই হাজার টাকা!
১৮ জুন ২০১৩গত ৫ই মার্চ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশের পর বাংলাদেশের বেশ কিছু জায়গায় তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবিরের কর্মী-সমর্থকরা৷ মামলার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই হামলার প্রধান শিকার ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন৷ বাড়ি-ঘর-মন্দির ভাঙচুর-পোড়ানো, লুটপাট, কোলের শিশু থেকে পরিবারের সর্বজ্যেষ্ঠ সদস্যকে পর্যন্ত পেটানো – সবই হয়েছে প্রতিবাদের নামে৷ সাতক্ষিরার অমিয় দাশের পরিবারও দেখেছে নিষ্ঠুরতা কাকে বলে!
চার বছরের মেয়েটি ঘুরে এসেছে আগুনে পুড়ে ছাই হওয়ার দোরগোড়া থেকে৷ সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে মা হয়েছেন প্রহৃত৷ তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে বৃদ্ধা, পক্ষাঘাতগ্রস্ত শাশুড়ি৷ পরিবারটির সবাই এখন ভালো করে জানে, হিন্দু হওয়া খুব বড় অপরাধ৷ চার বছরের শিশুটিও বুঝবে ভবিষ্যতে৷ কিন্তু ওর স্কুলপড়ুয়া বড় বোনটির নিশ্চয়ই আর তা বুঝতে বাকি নেই৷ সেদিনও নিশ্চয়ই মেয়েটি প্রতিবেশি বন্ধুদের সঙ্গে খেলেছে৷ বন্ধুদের অনেকেই নিরাপদ ছিল৷ অথচ ধোপাপাড়াকে দিনের আলোয় দেখতে হয়েছে বিভীষিকা৷ কয়রা উপজেলার ওই ছয়টি পরিবারের বেলায় অন্তত তা-ই সত্য৷ যে মেয়ে হামলাকারীরা ওদিক থেকে এসেছিল বলে আতঙ্কে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেছিল, সে আবার স্কুলে যায়৷ একদিন হয়ত বড় হবে, কিন্তু শিশুমন যে চিরতরে ছোট হয়ে গেল তার কী হবে!
সেদিন কী হয়েছিল তার বিবরণ গত ২৮ শে মার্চ প্রচারিত সাক্ষাৎকার শুনেই জানা যাবে৷ অমিয় দাশ অনুপু্ঙ্খ বর্ণনা দিয়েছিলেন দীর্ঘ কথোপকথনে৷ তবে আড়াই মাস পর তাঁর আর বেশি কিছু বলার নেই৷ এমন ক্ষেত্রে অতীতে যা হয়েছে তা-ই হচ্ছে৷ এক মুসলিম প্রতিবেশি এগিয়ে না এলে অমিয় আজ বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, সন্তানকে কী অবস্থায় পেতেন বলা মুশকিল৷ এখন জানেন তাঁদের তিনি কিভাবে বাঁচিয়ে রাখছেন৷ কাঁচামালের ব্যবসায়ী গৃহকর্তা এখন সবাইকে নিয়ে গাদাগাদি করে থাকেন পুড়ে যাওয়া ঘরের পাশে কোনোরকমে তোলা ছোট্ট একটি দোচালায়৷ নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার সব লুট হয়ে যাওয়ায় খুব স্বল্প পুঁজিতেই শুরু করেছেন ব্যবসা৷ না করলে সবার মুখে দু'মুঠো ভাত তুলে দেবেন কী করে?
অথচ ঘটনার পর যত আশ্বাস পেয়েছেন তার কিয়দংশ সত্যি হলেও স্বচ্ছল জীবনে হয়ত ফিরতে পারতেন অমিয় দাশ৷ কিছুই যে পাননি তা নয়৷স্থানীয় এএমপি ধোপাপাড়ার ছয়টি পরিবারকে দিয়ে এসেছিলেন ১৫ হাজার টাকা৷ অমিয় ভাগে পেয়েছেন আড়াই হাজার৷ ব্যাস৷ বিগত সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ‘অহঙ্কার' নিয়ে দেশ শাসন করছে আওয়ামী লীগ সরকার, সংখ্যালঘু এই পরিবারগুলোর জন্য তিন মাসেও কিছু করতে পারেনি৷
অমিয় শুনেছেন, ছয়টি পরিবারকে ঘর তোলার জন্য কিছু টিন দিয়েছে সরকার৷ স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে জেনেছেন শোনা কথা সত্য৷ তারপর? সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে ধর্ণা দেয়া চলছে৷ ভদ্রলোক শুনে বারবার বলছেন, ‘‘আমার একটু ঝামেলা রয়েছে, কয়েকদিন যাক, ঝামেলাটা সারি...৷''
অমিয় দাশরা এক দিনের বর্বরোচিত হামলায় যে ‘ঝামেলায়' পড়লেন তা কি আদৌ কোনোদিন সারবে? কে সারবেন? কবে?
সাক্ষাৎকার: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ