চালকবিহীন গাড়ির স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্যোগ
৫ এপ্রিল ২০১৪ভবিষ্যতের গাড়ি কেমন হবে? একটি প্রবণতা হলো – হ্যান্ডস-ফ্রি ড্রাইভিং৷ অর্থাৎ ভবিষ্যতের গাড়ি চলবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে৷ এমনকি অনলাইনে পাওয়া নির্দেশনাও অনুসরণ করবে৷
ভবিষ্যতের গাড়ির একটি মডেল তৈরি করেছে জার্মানির কার্লসরুয়ে বিশ্ববিদ্যালয়৷ পরীক্ষামূলক এই কারের রয়েছে বিশেষ ক্যামেরা, যা ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ঘুরতে পারে৷ কেআইটি-র ক্রিস্টফ স্টিলার বলেন, ‘‘আমাদের সামনে একটি ট্রাক রয়েছে, যা গাড়ির সামনে অনেকটা দেয়ালের মতো বাধা সৃষ্টি করেছে৷ আমাদের যানটি বুঝতে পারছে, সেখানে যাওয়া যাবে না৷''
মূল লক্ষ্য হচ্ছে, রাস্তায় দুর্ঘটনা কমানো৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতে গেলে গাড়িকে ক্যামেরা থেকে পাওয়া তথ্য তাৎক্ষণিক বিশ্লেষণ করতে হবে৷ ক্রিস্টফ স্টিলার বলেন, ‘‘ভবিষ্যতের গাড়ি নিঃসন্দেহে শত শত মেগাবাইট তথ্য বিশ্লেষণে সক্ষম হবে৷ আজকের পরিস্থিতিতে এমনটা কল্পনা করাই কঠিন৷ তবে কম্পিউটার প্রযুক্তি দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে৷ ফলে ভবিষ্যতে সহজেই দ্রুত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে স্টিয়ারিং ঘোরানো সম্ভব হবে৷''
সফটওয়্যার ডেভেলপারদের জন্য ভবিষ্যতের গাড়ির এই মডেল বেশ লাভজনক ব্যাপার৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পিটিভি সংস্থার প্রোগ্রামারদের কথা৷ ভবিষ্যতে ট্রাফিক কী ভাবে কাজ করতে পারে তা বর্ণনা করছেন তারা৷ রাস্তায় জট সৃষ্টির মতো বিষয়াদি একটি গাড়ি আরেকটিকে জানাতে সক্ষম হবে৷ এ জন্য অবশ্য যত বেশি সম্ভব গাড়িকে পরস্পরের সঙ্গে অনলাইনে যুক্ত করতে হবে৷ পিটিভি-র গবেষক টোমাস বেনৎস বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে এই ক্ষেত্রে সম্প্রসারণের সম্ভাবনা রয়েছে৷ আমরা এখনই দেখতে পাচ্ছি, গাড়ি নির্মাতারা শুধু টিনের খাঁচা বিক্রি করছে না, তারা গাড়িকে ‘বুদ্ধিমান' করে তোলার চেষ্টা করছে৷ যাতে প্রতিটি গাড়ির স্বকীয়তা তৈরি হয়৷''
নেটওয়ার্কযুক্ত গাড়ির ধারনাটি এখনো ভবিষ্যতের স্বপ্নের মধ্যে রয়েছে৷ তবে সে রকম ভবিষ্যৎ তৈরির চেষ্টা ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে৷ আর এটা বিশাল বাণিজ্য৷ ধারণা করা হয়, গোটা বিশ্বে গাড়ির পরিমাণ এক বিলিয়নের বেশি৷ ভবিষ্যতের গাড়ি তৈরির উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে জার্মান টেলিযোগাযোগ কোম্পানি ডয়চে টেলিকমও৷ টেলিকম-এর কানেক্টেড ড্রাইভ প্রকল্পের হর্স্ট লিওনব্যার্গার বলেন, ‘‘ব্যতিক্রমী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও ভবিষ্যতের এই ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছে৷ গুগল ইতোমধ্যে যুক্ত হয়েছে৷ পুরো খাতটিই ক্রমশ পরিষেবা খাতে রূপ নিচ্ছে৷ আমরা মনে হচ্ছে, অটো শিল্পে এক বিপ্লব আসন্ন৷ এই বিপ্লব গাড়িকে ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত করবে৷''
টেলিকম ইতোমধ্যে গাড়ির আরোহীদের জন্য মোবাইল অফিস সেবা চালু করেছে৷ এই সেবা ব্যবহার করে অনলাইনে কাজ করা সম্ভব৷ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, রাস্তায় কার নির্দেশ পালন করা হবে? তথ্য প্রযুক্তি শিল্প নাকি গাড়ি নির্মাতা? ইউরোপের এক নম্বর গাড়ি নির্মাতা অবশ্য মনে করে, অটো শিল্পই নেতৃত্ব দেবে৷ ফল্কসভাগেনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নতুন প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিয়ে ভীত নন৷ ফল্কসভাগেন-এর সিইও মার্টিন ভিন্টারকর্ন বলেন, ‘‘শুধু সফটওয়্যার গতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারবে না৷ পদার্থবিদ্যার সূত্র অনুযায়ী, চলতে হলে যন্ত্র দরকার৷ আর সেটা হচ্ছে কার৷ আমি মনে করি গুগল এবং অ্যাপল এবং অন্যান্যরা বুঝতে পেরেছে যে, সাফল্য পেতে হলে এমন কারো সঙ্গে জোট গড়তে হবে, যে হার্ডওয়্যার সরবরাহ করবে৷ আর সে কারণেই আমরা গুগলের সঙ্গে কাজ করছি৷ অ্যাপলের সঙ্গেও আমরা আলোচনা অব্যাহত রেখেছি৷ সফটওয়্যার কোম্পানি এবং গাড়ি নির্মাতাদের মধ্যে সহযোগিতা এখন এক নতুন ধারা বলা যায়৷''
আসলে নতুন প্রযুক্তির কারণেই গাড়ি নির্মাতারা তাদের কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে জোট বেঁধে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন৷ ক্রিস্টফ স্টিলার বলেন, ‘‘গাড়ি কোম্পানিগুলোর এমন অনেক কিছু শিখতে হবে যা গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এখনই জানে৷ আর তা হচ্ছে, বিশাল পরিমাণ তথ্য দ্রুত, সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ উপায়ে বিশ্লেষণ৷''
স্টিলার বলেন, ‘‘চাপ অনেক৷ তবে অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি এ ধরনের চাপের মধ্যে কাজ করে অভ্যস্ত৷''
ভবিষ্যতের গাড়ি তৈরিতে অনেক প্রতিষ্ঠানই পূর্ণ উদ্যমে কাজ শুরু করেছে৷ এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কে আগে লক্ষ্য পূরণে সক্ষম হবে?
বিশেষ ঘোষণা: এই সপ্তাহের অন্বেষণ কুইজে অংশ নিতে ক্লিক করুন এখানে৷