গ্রিসের সঙ্গে সমঝোতার শেষ উদ্যোগ
১ জুলাই ২০১৫দু'দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার একত্রিত হচ্ছেন ইউরো এলাকার অর্থমন্ত্রীবর্গ৷ বিশেষ করে যখন মঙ্গলবার মধ্যরাত্রে গ্রিস শিল্পোন্নত দুনিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে একটি ঋণের কিস্তি মেয়াদমতো পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়: দেড় বিলিয়ন ইউরোর একটি কিস্তি৷ ইতিপূর্বে আন্তর্জাতিক ‘পরিত্রাণ' সাহায্যের মেয়াদও সরকারিভাবে শেষ হয় ঐ মঙ্গলবারেই৷ অর্থাৎ বাস্তব বিচারে গ্রিস এখনই দেউলিয়া, কিন্তু গ্রিসের ‘ডিফল্ট' নথিভুক্ত করার জন্য আইএমএফ-এর হাতে ৩০ দিন সময় থাকছে – সেটাই গ্রিসের বাঁচোয়া৷
নয়ত গ্রিসের উগ্র-বামপন্থি সরকার ও তার নেতা আলেক্সিস সিপ্রাস৷ গত পাঁচ মাস ধরে গ্রিসের পাওনাদারদের সঙ্গে একটি দুর্বোধ্য খেলা খেলে চলেছেন৷ বুধবারেও সিরিজা-নেতৃত্বাধীন সরকারের শেষ চাল: গ্রিস ইউরোপীয় স্থায়িত্ব প্রণালী বা ইএসএম তহবিল থেকে আগামী দু'বছরের জন্য ২৯ দশমিক এক বিলিয়ন ইউরো প্রার্থনা করেছে৷উদ্দেশ্য: এই সময়কালের জন্য ‘‘আর্থিক প্রয়োজন পুরোপুরি মেটানো এবং যুগপৎ ঋণের পুনর্বিন্যাস''৷ মনে রাখতে হবে: গ্রিসের তরফ থেকে এই ধরনের ঋণ পরিশোধ পরিকল্পনার অনুরোধ এসেছে গত পাঁচ বছরে এই নিয়ে তিনবার৷
এমনকি গ্রিক কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন যে, বুধবার শেষ মুহূর্তে যদি কোনোরকম আপোশ করা সম্ভব হয়, তাহলে গণভোটও স্থগিত রাখা যেতে পারে৷ কিন্তু ব্রাসেলসে ইউরো এলাকার দেশগুলির অর্থমন্ত্রীরা সম্ভবত এত কমে সন্তুষ্ট হবেন না৷ অন্তত ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী মিশেল সাপ্যাঁ আরটিএল রেডিও-কে বুধবার সকালে বলেছেন যে, ‘‘আমাদের লক্ষ্য হলো, একটা সমঝোতা খুঁজে বের করা, সম্ভব হলে গণভোটের আগেই''৷
জার্মানির অনমনীয় মনোভাবের ফলে আপোশ সমস্যাকর হয়ে দাঁড়িয়েছে কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে সাপ্যাঁ বলেন, সবচেয়ে অনমনীয় অবস্থান এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সেই সব ছোট দেশগুলির তরফ থেকে, যারা নিজেরাই কঠিন সংস্কার প্রক্রিয়া কার্যকরি করেছে, অথচ যাদের জীবনযাত্রার মান গ্রিসের চেয়ে অনেক নীচে৷ ওদিকে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, গণভোটের আগে তিনি গ্রিসের নতুন প্রস্তাব সম্পর্কে আলোচনা করতে রাজি নন৷
রবিবারের গণভোট এগিয়ে আসছে৷ আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থারা গ্রহীতা হিসেবে গ্রিসের উপযোগিতা পুনরায় কমিয়েছে৷ এথেন্সে মঙ্গলবার বিশ হাজার মানুষ প্রবল বৃষ্টির মধ্যে বেইলআউট-এর প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন৷ গ্রিসের ব্যাংকগুলি সারা সপ্তাহ বন্ধ থাকছে, যদিও বুধবার হাজার খানেক শাখা সাময়িকভাবে খুলবে প্রবীণ পেনশনধারীরা যা-তে তাদের পেনশন নগদ তুলে নিতে পারেন, তার সুযোগ দিতে৷ বাকি জনতা এটিএম-গুলোয় লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে দিনে সাকুল্যে ৬০ ইউরো তুলতে পারছেন৷ সংকট যে একটা ঘনাচ্ছে, তার চিহ্ন সর্বত্র৷
সব সত্ত্বেও সর্বাধুনিক জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে যে, গ্রিকদের ৫৪ শতাংশ রবিবারের গণভোটে বেইলআউট-এর বিরুদ্ধে, এবং ৩৩ শতাংশ তার সপক্ষে ভোট দিতে চলেছেন – যদিও দুই তরফের মধ্যে ব্যবধান কিছুটা কমেছে৷
এসি/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি, ডিপিএ)