1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এক মাস পরেও শিনচিয়াং স্বাভাবিক হয় নি

৬ আগস্ট ২০০৯

এক মাস আগে চীনের উত্তর পশ্চিমের শিনচিয়াং প্রদেশে চীনা হান গোষ্ঠীর সঙ্গে স্থানীয় উইগুর সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটেছিল৷ চীনা কর্তৃপক্ষের সূত্র অনুযায়ী সংঘর্ষে ১৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/J4P8
গত এক মাসেও শিনচিয়াং’এর পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয় নিছবি: picture-alliance/ dpa

এক মাস পর

চারিদিকে পুড়ে যাওয়া গাড়ির অবশিষ্ট অংশ৷ রাস্তার কোণে সশস্ত্র পুলিশ৷ উরুমচি শহরে এক গাড়ির দোকানের দৃশ্য৷ ১৮ বছর বয়স্ক গাড়ির মিস্ত্রী দুয়ান জংচেং বেশ আতঙ্কিত৷ সে জানালো, ‘‘প্রথমে রাস্তা থেকে অনেক উইগুর এসে চীনা দোকানগুলির উপর পাথর ছুড়তে শুরু করে৷ তারপর তারা মানুষজনকে হত্যা করতে শুরু করে৷ গাড়ি থেকে টেনে বের করে এনে তাদের হত্যা করা হয়৷ আমার ভীষণ ভয় করছিল৷ আমরা ৫ জন মাটির নিচে একটা ছোট ঘরে লুকিয়ে ছিলাম৷ যারা ঐ হত্যালীলার শিকার হয়েছে, তারা একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছিল৷ আমি তাদের শোকে মুহ্যমান৷ কখনই ভাবতে পারি নি, আমার বাড়িতে এমনটা হতে পারে৷ আর এখন একটা ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে৷ আগে উইগুর প্রতিবেশীদের সঙ্গে দিব্যি কুশল বিনিময় করতাম৷ এখন তা করলে কেমন যেন কৃত্রিম লাগবে৷’’

দুয়ান জংচেং রাস্তার অন্যদিকে থাকে৷ শহরের ঐ বস্তিতে ছোট বাড়িগুলির মধ্যেই একটিতে তার আস্তানা৷ প্রতিবেশীরা বেশীরভাগই উইগুর৷ হত্যালীলার এক মাস পর বস্তির সরু গলিগুলি প্রায় খালি৷ স্থানীয় কমিটির উইগুররা সেখানে টহল দিচ্ছে৷ সাংবাদিক হিসেবে বার বার পরিচয়পত্র দেখাতে হচ্ছে৷ পেছনে সব সময় ছায়ার মত অনুসরণ করছে সরকারী চর৷ কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের কাজের উপর কোনো বাধানিষেধ আরোপ না করা সত্ত্বেও এমন অবস্থায় উইগুরদের সঙ্গে খোলামেলা পরিবেশে কথা বলা কঠিন৷ তা সত্ত্বেও একজনের সঙ্গে কথা বলা গেল৷ তিনি জানালেন, এই এলাকায় বেশীরভাগ মানুষই শিনচিয়াং প্রদেশের দক্ষিণের আকসু, খোটান, কাশগড় ইত্যাদি শহর থেকে কাজের সন্ধানে উরুমচিতে এসেছে৷ কিন্তু অশান্তির ফলে তাদের অনেকেই শহর ছেড়ে চলে গেছে৷

উইগুরদের সমস্যা

হেলেত নিয়াজ উইগুর সাংবাদিক৷ গত বছর পর্যন্ত কাজ করতেন এক রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্রের দপ্তরে৷ তারপর তাঁকে বরখাস্ত করা হয়৷ তিনি ইন্টারনেটে লক্ষ্য করেছেন, পরিস্থিতি কীভাবে ক্রমশঃ বিস্ফোরক হয়ে উঠছিল৷ এক খেলনার কারখানায় কীভাবে দুই উইগুর শ্রমিকের উপর চীনা হান গোষ্ঠীর শ্রমিকরা নৃশংসভাবে অত্যাচার চালিয়েছিল, জুন মাসের শেষে তা জানাজানি হয়ে যায়৷ তাঁর মতে, সরকারী নীতির ফলে ফায়দা হয়েছে শুধু হান সম্প্রদায়ের৷ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কিছুই পায় নি৷ শিনচিয়াং প্রদেশের ৯৫ শতাংশ সংস্থাই চীনাদের হাতে৷ তারা উইগুরদের কাজ দিতে চায় না৷ খোলামেলাভাবেই তারা কর্মসংস্থান দফতরে লিখে জানিয়ে দেয়, যে তারা উইগুর কর্মী বা শ্রমিক চায় না৷ ফলে উইগুরদের আয়ের উৎস বেশ কম৷

চীনাদের দৃষ্টিভঙ্গি

তবে চীনাদের অনেকে মনে করে, যে উইগুরা আসলে অকৃতজ্ঞ৷ তারা ইচ্ছা করলে ৩টি সন্তান রাখতে পারে৷ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও তাদের বাড়তি সুবিধা রয়েছে৷ উরুমচির সামাজিক বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির পান শিপিং মনে করেন, উইগুরদের এই বাড়তি কিছু অধিকার আরও অনেক দিন বজায় রাখা উচিত৷ কিন্তু তাঁর মতে, সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে চীনা প্রশাসনের নীতির কিছু মৌলিক পরিবর্তনের প্রয়োজন৷ তিনি বললেন, ‘‘আমি মনে করি, কোনো আধুনিক সমাজে নাগরিক সত্ত্বাকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত – জাতিগত পরিচয় নয়৷ জার্মান নাগরিকদের পাসপোর্টে কি লেখা থাকে, যে নাগরিকদের জাতিগত পরিচয় কী? এমনটা লেখার অনুমতিই হয়তো নেই, লিখলে তা প্রায় বর্ণবাদের সমকক্ষ হবে৷ আমাদের যা করতে হবে, তা হল – কেউ যদি নিজের জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে সম্মান চায়, তাহলে তাকে সেই সম্মান অবশ্যই দেওয়া উচিত৷ কিন্তু তার কাছে সেই পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ না হলে তার প্রতি সাধারণ নাগরিকের মতই আচরণ করা উচিত৷’’

লেখক: আসট্রিড ফ্রাইআইসেন, অনুবাদ: সঞ্জীব বর্মন, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল ফারূক