বাণিজ্যের মর্যাদা ফিরে পাবে?
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড স্ট্যাটাস, অর্থাৎ অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যের মর্যাদাপ্রাপ্ত দেশগুলির তালিকা থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেওয়া হয় ২০১৩ সালে, রানা প্লাজা বিপর্যয়ের পর৷ অবশ্য বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তৈরি পোশাক শিল্প বা গার্মেন্টস শিল্প এর থেকে কোনো সুবিধা পায় না৷ অবশ্য সেই শিল্প প্রধানত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে রপ্তানি করে বছরে ৪০০ কোটি ডলার আয় করে থাকে; চল্লিশ লাখ মানুষ কাজ করেন এই গার্মেন্টস শিল্পে, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই স্বল্পশিক্ষিত মহিলা৷
বাংলাদেশ সরকার বহুদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছেন, বিনা শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রে গার্মেন্টস রপ্তানির সুবিধা পাবার৷ ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে তাজরিন ফ্যাশনস ফ্যাকটরিতে অগ্নিকাণ্ড এবং ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে রানা প্লাজা ধসে পড়ে সব মিলিয়ে মোট দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারানোর পর, স্বভাবতই বিনা শুল্কে গার্মেন্টস রপ্তানির সুবিধা পাবার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসে৷
ওয়াশিংটন গত আগস্ট মাসে যে জেনারালাইজড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্সেস ঘোষণা করে, তা-তে ১২২টি দেশের নাম করা হয়েছে৷ এই সিস্টেমের কল্যাণে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলি কম বা বিনা শুল্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির অধিকার পায়৷ ২০১২ সালে বাংলাদেশ এই জিএসপি-র সুবিধা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় সাড়ে তিন কোটি ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছিল – প্রধানত তামাক, খেলাধুলার সরঞ্জাম, চীনে মাটির বাসন ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র৷
এবার মার্কিন ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটেটিভ-এর কার্যালয় থেকে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসেছেন কলকারখানায় নিরাপত্তার মান এবং শ্রমিক সংগঠনগুলির স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা সরেজমিনে যাচাই করার জন্য৷ মঙ্গলবার বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ঘোষণা করেন যে, বাংলাদেশ মার্কিন অ্যাকশন প্লানের সব দফা পূরণ করেছে৷ কিন্তু বুধবার মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটেটিভ মাইকেল ডেলনি মন্তব্য করেছেন, মার্কিন প্রতিনিধিরা নিজেরাও অ্যাকশন প্ল্যানের বিভিন্ন দফার খেয়াল রাখছেন এবং সব কিছু দেখে তাঁদের মনে হয়েছে যে, এখনও কিছু কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন৷ ডেলনি বলেন, বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে প্রগতি অর্জিত হয়েছে; কিন্তু নিরাপত্তা এবং শ্রমিক সংগঠনগুলিকে হয়রানি থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে আরো বেশি করা দরকার৷
বাংলাদেশ সরকার অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার দরুণ এ যাবৎ মোট ৩৬৪টি গার্মেন্টস ইউনিট বন্ধ করে দিয়েছেন; শ্রমিক সংগঠন সংক্রান্ত আইনের রদবদল করা হয়েছে; ফ্যাকটরি ইনস্পেক্টরদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে৷ সরকার বলছেন, প্রায় ৫০০ নতুন কারখানা-ভিত্তিক শ্রমিক সংগঠন নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং স্পেশাল এক্সপোর্ট জোনে শ্রমিক কল্যাণ সমিতি গঠন করা হয়েছে৷ তবে মূল শ্রমিক সংগঠনগুলিকে গার্মেন্টস সেক্টরে রেজিস্ট্রেশনে বাধা দেওয়া হচ্ছে, বলে শ্রমিক অধিকার আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, যেমন তাদের অভিযোগ যে, অনেক কারখানা-ভিত্তিক শ্রমিক সংগঠন বস্তুত মালিকদের সৃষ্টি ও মালিকদের মর্জিতেই চলে৷
এসি/ডিজি (এপি, ডিপিএ)